বুড়িচং প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কুমিল্লা -৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য সাবেক আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আবদুল মতিন খসরু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন।
আব্দুল মতিন খসরু ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী মোঃ আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম, তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন, তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে, বড় মেয়েটি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত আছেন, ছেলেটি আর্কিটেট পেশায় নিয়োজিত।
আবদুল মতিন খসরু মাধবপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করে কুমিল্লা ল কলেজ থেকে এল এল বি সম্পন্ন করেন।
এলএলবি এবং বিকম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যোগদান করেন এবং ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে ৭ম সংসদে (১৯৯৬-২০০১) আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনি। তিনি দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সদস্য হন। ২০১৯ সালেও তাকে একই পদে বহাল রাখা হয়।
শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় ২৩ জুন ১৯৯৬ হতে ১৪ জানুয়ারি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পরে ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৭ সাল থেকে ১৫ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মতিন খসরু। আইনমন্ত্রী থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের বিচারের পথ খোলে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের থানা ও জেলার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শুধু রাজনীতে নয়, আইন অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তিনি কয়েকবার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২১-২০২২ সেশনে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গত ১৫ মার্চ করোনা টেস্টের পরদিন (১৬ মার্চ) সকালে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে অবনতি হওয়ায় ১৮দিন পূর্বে তাকে ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
আবদুল মতিন খসরুর ৫টি জানাজার মধ্যে প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ৮ টায় ঢাকা বক্সী বাজার, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। দ্বিতীয় জানাজা সকাল ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন। তৃতীয় জানাজা যোহর নামাজের পর, বুড়িচং আনন্দ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। চতুর্থ জানাজা বিকাল ৪ টায় ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। পঞ্চম জানাজা আছর নামাজের পর, মরহুমের নিজ গ্রামের বাড়ী ব্রাহ্মণপাড়া উপজলার মিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বাদ যোহর তাঁর নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদরের আনন্দ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩য় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আবুল হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আখলাক হায়দার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, মরহুমের ছোট ভাই এডভোকেট আবদুল মুমিন ফেরদৌস, মরহুমের ছেলে আবদুল মুমিন ওয়াছিফ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রেজাউল করিম খোকন,সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম রেজা সৌরভ,বিএনপির বুড়িচং উপজেলা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মিজানুর রহমান, ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জসিম,কুমিল্লা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোঃ শরীফ,কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহবুব আলম,কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা শাহীনুল ইসলাম শাহীন,মোঃ জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জানাজা শেষে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ৩য় জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা কাজী অলি উল্লাহ অলি ভূইয়া।
কমেন্ট করুন