1. shahalom.socio@gmail.com : admin :
  2. banglarmukh71@gmail.com : admin1 :
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পদ পেয়ে শতকোটি টাকার মালিক আতিক।

  • আপডেট করা হয়েছে বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ২০২ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্ট :
আতিকুর রহমান আতিক। সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। পড়েছেন ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত। ৩১ বছর বয়সী আতিক মোটরসাইকেল বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সাভারের এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঘুরে ফিরে । রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের কথা বলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্থানীয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছ থেকে আদায় করেন চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারধর করেন। স্থানীয় রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় আতিকের দাপটে তটস্থ থাকেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও। তার বাবা একটি গার্মেন্টসে মাত্র ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা ছিল এক সময়।আতিক করেছেন একাধিক বিয়ে। আছে একাধিক বান্ধবীও। তাদের নিয়ে দুবাই-সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার মধ্যদিয়ে যেন আলাদিনের জাদুর প্রদীপ হাতে পান আতিক। এলাকাবাসী জানান, ঢাকা-১৯ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিবের হাত ধরে মূলত সাভারের রাজনীতিতে আতিকের নাটকীয় উত্থান।
স্থানীয়দের জমি জবরদখল, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, অবৈধভাবে একচেটিয়া ঠিকাদারি ব্যবসা, ফুটপাথ থেকে শুরু করে শিল্পপতির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধর, স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীদের অপদস্থ, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানির হাজারো অভিযোগ আতিকের বিরুদ্ধে। আতিকের নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী তৎকালীন সাভার থানার পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বিএনপি নেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। অনেক ভুক্তভোগীই এলাকাছাড়া হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানান অপরাধে আতিকের ছাত্রলীগের পদ-পদবি স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার না করিয়ে পুনরায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে তাকে স্বপদে বহাল করা হয় বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি আতিককে ছাত্রলীগের ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি করার জন্য জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদবির করছেন বলে তথ্য মিলেছে। আতিকের নানা অপকর্মের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছেও অভিযোগ এসেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ খতিয়ে দেখে দোষী হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওদিকে নিজ নামে অস্ত্র কিনতে কোটি টাকা আয় দেখিয়ে আবেদন করেছেন আতিক। ২০১৬ সালের আগে সাভারের ভাইবোন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছোট্ট একটি ঘুপচি টিনশেড ঘরে থাকলেও বর্তমানে সাভারের রেডিও কলোনি থেকে শুরু করে নামে- বেনামে বহুতল একাধিক বাড়ি রয়েছে আতিকের। আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য আবেদনপত্রে নিজের কোটি টাকা আয় দেখিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।
সরজমিন গত কয়েকদিন সাভার উপজেলা, থানা রোড, রেডিও কলোনি, আড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে পাওয়া গেছে এমন সব তথ্য-চিত্র।

ভুক্তভোগীরা জানান, আতিককে নিয়ে কথা বলে এর আগে একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নতুন করে নির্যাতনের শিকার হতে চান না তারা। দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন, মারধর, ডিশ ব্যবসা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি দখল, জাল দলিল করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, চাঁদাবাজি, লুটপাট, পদ বাণিজ্য, অস্ত্রবাজি তার নেশা। এভাবেই সাভারে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গত ৭ বছরে আতিক শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আতিকের অত্যাচারে কোটি টাকার বসতভিটে ছেড়ে স্থানীয় অনেকে পালিয়েছেন। কেউ আবার প্রাণ হারানোর ভয়ে নামমাত্র মূল্যে তাদের সারা জীবনের সঞ্চয়ের সম্পদ আতিকের হাতে তুলে দিয়েছেন। এদের তালিকায় রয়েছেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারসহ অনেকেই। ভুক্তভোগীরা জানান, টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় জমি দখলের কাজও করেন আতিক। আবার রাতের আঁধারে বাসা থেকে তুলে এনে নির্যাতন করেন আতিক। সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণাদি মানবজমিনের হাতে রয়েছে। আতিকের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার তেওতা গ্রামে। নদী ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ২ ছেলে, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে সাভারে আসেন আতিকের বাবা ইউসুফ মিয়া। শেষ সম্বল জমানো টাকা দিয়ে বাড্ডা-ভাটপাড়া এলাকায় এক খণ্ড জমি কিনে টিনশেড ঘরে বসবাস শুরু করেন। ৬ জনের সংসারে ৩ বেলা খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল ইউসুফ মিয়ার। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ভাইয়ের সুপারিশে যোগ্য ও মেধাবীদের ডিঙ্গিয়ে ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন আতিক।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাভার মডেল থানায় কর্মরত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার ছোট ভাই এক উপ-পরিদর্শককে পিটিয়ে আলোচনায় আসেন আতিক। নারায়ণগঞ্জের একটি থানায় কর্মরত ভুক্তভোগী এই পুলিশ কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আমার দুর্ভাগ্য। কপালে ছিল মেনে নিয়েছি। ২০১৬ সালে আতিক ও অন্য আরেক গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে গেলে আতিকের লোকজন আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তখন থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও পরবর্তীতে আতিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন টেন্ডার বাণিজ্য। অন্য ঠিকাদাররা টেন্ডার ড্রপ করতে আসলে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়্‌গ। আতিক বাহিনীর ভয়ে আর কেউ টেন্ডারও ড্রপ করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে। পরিবহন সেক্টর থেকে আতিকের মাসিক আয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। দলে এবং দলের বাইরে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মাদক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ান। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্নস্থান দখল করে হকার নেতা কবিরের মাধ্যমে হকারদের কাছ থেকে প্রতিমাসে আদায় করেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। রয়েছে পদ বাণিজ্যেরও অভিযোগ। সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, চাঁদাবাজ, আর ছাত্রদলের ক্যাডারদের পদায়ন করে অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পোস্টার, ব্যানার আর রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে প্রতিমাসে আদায় করেন কয়েক লাখ টাকা। রেডিও কলোনিসহ পছন্দকৃত এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন জোর করে। যেখান থেকে প্রতিমাসে আয় অন্তত ৬ লাখ টাকা। সাভার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রমজান আহাম্মেদ বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে লোকজন নিয়ে বালুমহাল দখল সংক্রান্ত একটি সমস্যা হয়েছিল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগের পর বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আতিকের ৫টি বাড়ি, ৫টি প্লট, হ্যারিয়ারসহ বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি, ব্যাংকে কোটি টাকা থাকার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, স্ত্রী ছাড়াও একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আতিকের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচিত হন। আড়াপাড়া এলাকার এক ডিশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যবসা দখল করে নেয়। ওই ডিশ ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আতিক। চাঁদার টাকা না দেয়ায় ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে হামলা ও মারধর করে ডিশ ব্যবসা দখল করে নেন। আরেক ডিশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডিশের প্রায় ৩ হাজার লাইন জোর করে দখলে নিয়েছে। এলাকায় কেউ এক গাড়ি ইট নামাতে গেলেও চাঁদা দিতে হয় আতিককে। উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, আতিকের যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে যেখানে এফডিআরসহ রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পরই আতিক সাভারের রেডিও কলোনির ভাটপাড়ায় ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমিটিতে ২০১৯ সালে ৪ তলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে ৮ তলা বহুতল ভবন গড়ে তোলেন। স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা ভাইবোনসহ পরিবারের সদস্য নিয়ে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। পরে একই এলাকায় আরও ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ২০১৮ সালে আরও একটি ৮ তলা বাড়ি করেন। দুটো বাড়িই তার বাবা ইউসুফের নামে। পাশে ৬ শতাংশ জায়গা বোনের নামে ক্রয় করে সেখানে ৬ তলা একটি বাড়ি বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। ২০২১ সালে জাহাঙ্গীরনগর হাউজিংয়ে তার বাবার নামে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ১২ শতাংশের একটি প্লট তৈরি করেন। সাভার বাড্ডা মৌজার ১১৫৪ দাগে ২০১৬ সালে ৩.১২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে ১৩ শতাংশের ওপর ভাটপাড়ায় একটি বিলাসবহুল অফিস তৈরি করেন। ২০১৭ সালে জমির মালিক ফারুকুলের কাছ থেকে জোরপূর্বক নামে মাত্র কয়েক লাখ টাকায় জমিটি দখলে নেন আতিক। এ নিয়ে বাড়ির মালিককে তুলে আনার হুমকির অডিও রেকর্ড মানবজমিনের হাতে রয়েছে। অডিওতে আতিক বলেন, “শোনেন ফারুক ভাই এই জায়গাটি আমার লাগবেই। এটার জন্য আপনাকে আমার ধরে আনতে হলেও তাই করবো। বহুত মোটা হয়ে গেছে চামড়া। আপনাকে ধরে আনতে কিন্তু এক মিনিটও সময় লাগবে না। আপনাকে ধরে নিয়ে আসমু আমি”। এ ছাড়াও আতিকের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের তেওতায় বোন জামাইয়ের নামে ৮ বিঘার একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। নামে-বেনামে আতিকের আরও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। স্থানীয়রা জানান, আতিক ২০১৫ সালে স্বর্ণা আক্তারকে বিয়ে করেন। আতিক এক সন্তানের জনক। আতিকের জন্ম ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৯২। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স প্রায় ৩১ বছর। থাকেন ১৯/১ আড়াপাড়ায়।আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে আবেদন: আতিকুর রহমান আতিক আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে আবেদন করেছেন। তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার হিসেবে উল্লেখ করে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউসুফ এন্টারপ্রাইজের বছরে আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪ টাকা। গত বছরের ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে তিনি একটি শটগান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। এদিকে গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আতিকের বাবা মো. ইউসুফ নিজ এলাকায় খুলে বসেছেন মানবাধিকার সংগঠন।

পদ বাণিজ্য প্রসঙ্গে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, আতিক ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ৮-৯ লাখ টাকা নিয়েও পদ-পদবি দেন নি। পরে যারা হাইব্রিড হয়ে দলে এসেছেন তাদেরকেই বেশি টাকায় পদ দিয়েছেন।

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা অনুযায়ী, ছাত্রলীগের পদে থাকা অবস্থায় কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে আতিক ঠিকাদারি ব্যবসাসহ একাধিক ব্যবসা করছেন। তিনি বিবাহিত। এবং তার একটি সন্তানও রয়েছে।

পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি চারটি দরপত্র জমা দেয়ার শেষদিন আতিকের ক্যাডার বাহিনী অন্যসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। প্রভাব খাটিয়ে তিনি চারটি দরপত্র বাগিয়ে নেন। ২০১৫ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৮ সালের মে মাসে ওই পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। সাভার উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটিকেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি ওই কমিটি পুনর্বহাল করেন। দ্বিতীয়বার পদ পেয়ে আতিক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

পৌরসভার ভাটপাড়া মহল্লার ফারুকুল ইসলাম জানান, তার ১২ শতাংশ জমির ভুয়া মালিক সাজিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে আতিক জমিটি দখলে নেয়। বাধ্য হয়ে ঢাকা নিম্ন আদালতে আতিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী বলেন, সাভার সিআরপি সংলগ্ন আমার কোটি টাকার বাড়িতে আতিক ও তার লোকজন ভাঙচুর চালায়। এ সময় সে মিথ্যা দলিল বানিয়ে এক ব্যক্তির কাছে জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য করে। বাড়িটি বিক্রি করতে না চাইলে আতিক আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকরাসহ নানান ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পানির দামে জমিটি ওদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হই। আরেক ভুক্তভোগী সরকারি কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১৮ শতাংশ জমি ছিল আমার। চিরাচরিতভাবে ওরা ভুয়া দলিল তৈরি করে। এরপর আমাকে উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এ ঘটনায় আমি মামলা করি। কিন্তু পরে দেখলাম এভাবে করে ওদের সঙ্গে আর পেরে উঠবো না। সবশেষে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা মূল্যের জমি অল্প দামে বিক্রি করে দেই।

স্থানীয় এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমরা ত্যাগী নেতাকর্মীরা আজ আতিকের জন্য কোণঠাসা। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজপথে থেকে যারা লড়াই সংগ্রাম করেছে তারা আজ বঞ্চিত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সব জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে আতিকের অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং বিবাহিত হয়েও সংগঠনের দায়িত্বে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো শুনেছি। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা-১৯ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি দেয়। সেখানে আমাদের খুব বেশি ইন্টারফেয়ার করার সুযোগ নেই। সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগের বিষয়গুলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নলেজে রয়েছে। আতিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা নেবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অভিযোগ- সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আতিক এসব অপকর্ম করছেন। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এনাম বলেন, আমি তো একলা চলো নীতিতে বিশ্বাসী। আমার কাছে দলের জন্য যে কাজ করবে তার গুরুত্ব আগে। সেখানে আশীর্বাদপুষ্ট বলে কোনো কথা নেই।

অভিযোগের বিষয়ে আতিকুর রহমান আতিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আমি বলতে পারবো না। টুকটাক কিছু থাকবে। আমরা ভাই ফেরেস্তা না। আমার জীবনে আমি যতটুকু যা কিছু করেছি বা যা কিছু হয়েছে এটা যদি কপালে না লেখা থাকতো তাহলে আমি করতে পারতাম না।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে কোনো ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামঞ্জস্য না হলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কোনো অবৈধ সম্পদের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। এবং তাদেরকে জবাবাদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন