স্টাফ রিপোর্টার:
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলা সমাজ সেবা অফিস যেন দূর্নীতির আখড়া। এই অফিসের কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আউয়ালের দাপটে বিভিন্ন সুবিধা ভোগীরা কোন কথা বলতে পারে না। ভোক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে এবং গালমন্দ করার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া টাকা না দিলে কেউ এই অফিস থেকে সরকারী কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা নিতে পারে না। বিভিন্ন সংস্থার নামে সরকারী বরাদ্ধকৃত টাকা উত্তোলন করতে হলেও তাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন ডাটা এন্টির কাজ করতে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বুড়িচংয়ে যোগদানের পর থেকে এই অফিসের প্রত্যেক সুবিধা ভোগীরা জ্বালাতনে রয়েছে। তার ইচ্ছার বাহিরে গেলেই ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি ভিডিও দেখা যায়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভোক্তভোগীরা অফিসে গিয়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আউয়ালের সাথে তর্ক-বির্তক করছে। এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তার কাছে কোন সুবিধাভোগী কোন তথ্য জানতে চাইলেও সে রক্তচোখা ভাব করে এবং উগ্র মেজাজে ভোক্তভোগীদের কে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়।
২৫ মে মঙ্গলবার বুড়িচং উপজেলার সদরের মহোরম আলীর ছেলে মোঃ সাজন আলী অভিযোগ করেন যে তার নিজস্ব মোবাইল ০১৭৩৬৭৪৩৯২৬ এই নম্বর টি দিয়ে যায়। পরবর্তীতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার তালিকা থেকে তার নিজের মোবাইল নম্বারটি কেটে ০১৭০৩৬৮৬৫৪৫টি দিয়ে টাকা ট্রান্সফার করে ফেলে। তার নিজের মোবাইল টাকা না যাওয়ায় বুড়িচং উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে গিয়ে ভাতার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজ সেবা কর্মকর্তা তাকে কয়েকদিন যাবত ঘুরাতে থাকে ও হয়রানী করে এবং গালমন্দ করেছে বলে ভোক্তভোগী সাজন আলী জানান।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমাজ সেবা কার্যালয়ের অধিনে বিতরণকৃত বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভূক্তভোগিদের মোবাইলে না এসে অন্য নাম্বারে চালে যাচ্ছে। ফলে তালিকায় নাম থেকেও সরকারী ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভূক্তভোগীরা। আর এই অভিযোগের তীর এসেছে বুড়িচং উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আওয়ালের বিরেুদ্ধে। ভুক্তভোগী কয়েকজন উপস্থিত থেকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আওয়াল এর বিরুদ্ধে সরাসরি এমন অভিযোগ আনেন। ভূক্তভোগী মোঃ সাজন মিয়া বলেন, আমি ভাতার বই করার পর থেকে সবসময়ই ভাতা পেয়ে আসছি। এইবার ডিজিটাল করার নাম করে আমাকে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত করেছে। আমার ফোন নাম্বার চেয়েছিল নগদে আইডি খোলার জন্য। আমার সঠিক নাম্বার দিয়েছি। কিন্তু আমার মোবাইলে টাকা না এসে চলে অন্য মোবাইলে। আমি এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে আসলে আমাকে অনেক গালমন্দ ও হুমকি ধামকি দিয়েছে। আমি তিন দিন যাবৎ আসা যাওয়া করি। কোনো ভাবেই এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে নারাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা।
এ বিষয় নিয়ে বুড়িচং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আওয়াল এর সাথে কথা বললে তিনি প্রথম এ বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ের বলেন নগদের কর্মকর্তারা ভালো জানে। আমি এ বিষয়ে অবগত নই। নগদে কর্মরত লোকদের সাথে কথা বলার সময় তারা জানায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের দেয়া তালিকা অনুযায়ী টাকা দেয়া হচ্ছে। কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া একটি কলমও আমাদের বসানোর ক্ষমতা নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিকদের নিউজ না করার অনুরোধ করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আওয়াল। অন্য ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী নাজমা আক্তার বলেন, আমি অনেক অভাবে আছি। আমার ভাতা ও দিচ্ছে না। আমার কোনো কথাই শোনে না। আমাকে বলে আমার কাগজ খুঁজে পাচ্ছে না। আমি এখন কি করবো? উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে পূর্বে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে। প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হতাশ ভূক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জেড এম মিজানুর রহমান খান বলেন, নতুন করে মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা প্রদানের কারনে হয়তো সমস্যা হতে পারে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো পাঠালে আমি তদন্ত করে সংশোধনের ব্যবস্থা করবো।
কমেন্ট করুন