1. shahalom.socio@gmail.com : admin :
  2. banglarmukh71@gmail.com : admin1 :
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

এপ্রিল ফুলের রক্তাক্ত ইতিহাস

  • আপডেট করা হয়েছে বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১
  • ৩৮৫ বার পড়া হয়েছে
                                                              গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির 
১. এপ্রিল ফুল নাকি ট্রাজেডি দিবসঃ
এপ্রিল ফুল : এপ্রিল ফুল শব্দটা ইংরেজি। এর অর্থ এপ্রিলের বোকা। এপ্রিল ফুল ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল রাজা ফার্ডিনান্ডের ঘৃণ্যতম প্রতারণার মাধ্যমে স্পেনের রাজধানীতে খ্রীষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনী অসংখ্য মুসলমান নারী- পুরুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল। বিশ্ব খ্রীষ্টান সম্প্রদায় তাদের রচিত প্রতারণাকে স্মরণ করে রাখতে এই দিনকে ‘এপ্রিলের ফুল হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করে থাকে।মুসলমানদের লজ্জা দেওয়া ও ইসলামকে হেয় করার জন্য মূলত এই দিবসটি প্রতি বছর পালন করা হয়। অনেক অজ্ঞ মুসলিমরাও বিশ্ব বোকা দিবস হিসেবে এই দিনে পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ে মজা পায়।মুসলিমদের বোকা বানানোর এ দিনটিকে স্মরণীয় করতে আসল ঘটনা বেমালুম চাপা দিয়ে ১৫০০ সালের ১ এপ্রিল থেকে খ্রিস্টান জগতে এ দিনটিকে হাসি, ঠাট্টা এবং মিথ্যা প্রেম দেয়া-নেয়ার দিন হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে।
২. ট্রাজেডি দিবস ঃ
১ এপ্রিল ঐতিহাসিক গ্রানাডা ট্রাজেডি দিবস। প্রতারক ফার্ডিনেন্ড ও ইসাবেলা স্পেনের মুসলমানদেরকে মসজিদে আশ্রয় নিতে কিংবা মরোক্কো যেতে চাইলে খৃষ্টান জাহাজে উঠতে বলেন। কিছু সংখ্যক মুসলমান আগেই মরক্কো সফর করেছিল। সরল মনা মুসলমানেরা যখন মসজিদে এবং জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করলো তখন মসজিদের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে এবং জাহাজকে সমুদ্রে ভাসিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের নাম মুছে ফেলে নতুন করে যোগ হয় এক খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের। ফলে স্পেন হয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর শোকের স্মারক। প্রতারণা, হাসি তামাশাচ্ছলে ১লা এপ্রিল উদযাপিত হলেও এটি মূলতঃ মুসলমানদের জন্য এক ট্র্যাজেডির দিন আর সারা বিশ্বের মানুষের মানবতা লংঘনের দিন।
৩. পহেলা এপ্রিলঃ রক্তাক্ত ইতিহাস
১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকে। স্পেনে তখন মুসলমানদের শাসন। শাসক বাদশাহ-হাসান। আবু আব্দুল্লাহ তার ছেলে। খ্রীষ্টানগণ বাদশাহর বিরুদ্ধে তার পুত্র আবু আব্দুল্লাহকে দিয়ে বিদ্রোহ করায়। বাবাকে গদীচ্যুত করলে তাকে ক্ষমতায় বসানো হবে আশ্বাস পেয়ে পিতার বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করে। বাদশাহ হাসান ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করেন। আবু আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর শুরু হয় স্পেনের মুসলমানদের পতন। আবু আব্দুল্লাহর দুর্বল নেতৃত্ব, নৈতিক অবস্থান চিন্তা করে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানী ইসাবেলার যৌথ বাহিনী স্পেন আক্রমন করে। আবু আব্দুল্লাহ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য দরবারে বিশেষ সভার আয়োজন করেন। ফার্ডিন্যান্ড আবু আব্দুল্লাহকে আশ্বাস দিলো যে তারা যদি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তাদের জীবন দান করা হবে। দুর্বল রাজা ও তার সভাসদস্যগণ অতীতের চুক্তিভঙ্গের রেকর্ড ভুলে গিয়ে ফার্ডিন্যান্ডের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করে। অনেক সাহসী সৈনিক আত্মসমর্পনের পরিবর্তে লড়াই করে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করলেও অন্য সকলে আত্মসমর্পনের পথে যায়। ফলে সহজেই রাজা পঞ্চম ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার রাজপথ সহ সমগ্র শহর দখল করে নেয়। ১৪৯১ সালের ২৪শে নভেম্বর মুসলিম বাহিনীর শেষ আশ্রয়স্থল রাজধানী গ্রানাডার দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় ফার্ডিন্যান্দ বাহিনী । ফার্ডিনান্দের শক্তির সামনে ছোট ছোট মুসলিম শাসকরা ছিল দুর্বল, বলা যেতে পারে প্রায় শক্তিহীন। মুসলিম সেনাপতি মূসা আত্মসমর্পণের চেয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেয়াকেই অধিক সম্মানজনক মনে করেছিলেন। আবু আব্দুল্লাহ খ্রিস্টানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণে রক্ষা পাবেন বলে যে ধারণা করেছিলেন, শিগগিরই তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফার্ডিন্যান্দ বাহিনী শহর অবরোধ করে রাখে। বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যান কিছু মুসলিম। মুসলিমদের ধর্মচ্যুত করার পায়তারা চলে ফার্ডিন্যান্দের আমলে। মুসলিমদের আরবী পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আরবীয় পোশাক পরা ছিল আইন পরিপন্থী। বাধ্য করা হয় মুসলিমদের খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি হতে। এতে যারা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করত, তাদের জন্য ছিল বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। মুসলিমদের জন্য বিশেষ পোশাক ছিল, যা দেখে যত্রতত্র তাদের অপদস্ত করা হত।
ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার বাহিনী শুরু করে নৃশংস ও বর্বর পন্থায় হত্যাযজ্ঞ, লুন্ঠন ও ধর্ষন। অত্যাচারের মাত্রা সীমা অতিক্রম করলে অনেক মুসলিম বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহী এসব লোকজনকে হত্যা করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে চরম এক নৃশংস কুট কৌশল গ্রহণ করে তারা। শক্তিশালী খ্রিষ্টান বাহিনী মুসলমানদের ওপর দলবল তথা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আক্রমন চালালে মুসলমানগ সকল শক্তি সামর্থ্য দিয়ে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও তাদের দলের লোকদের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের সাথে চলা তুমুল সংঘর্ষ বন্ধ হচ্ছেনা দেখে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষনা করে : হে মুসলমানগণ যদি তোমরা আমাদের আক্রমণ থেকে বাচঁতে চাও তাহলে আমাদের দু’টি প্রস্তাব নির্ধিদ্বায় মেনে নাও । প্রস্তাবদ্বয় হচ্ছেঃ (১) তোমরা অস্ত্র ত্যাগ করে স্পেন তথা গ্রানাডার সকল বড় বড় মসজিদে অবস্থান কর তাহলে তোমরা সকলে নিরাপদে থাকবে কেউ তোমাদের উপর আক্রমণ করবেনা। (২) যারা নৌজাহাজে আশ্রয় নিবে তাদেরকে নিরাপদে অন্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। তাদের উপরও আমাদের কেউ আক্রমণ চালাবেনা।
ইহুদি-খৃষ্ঠানদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় মুসলিমগণ আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা ভুলে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়। সরল বিশ্বাসে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অসংখ্য মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ বনিতার কেউ কেউ গ্রানাডার বড় বড় মসজিদে অস্ত্র ছাড়া আশ্রয় গ্রহণ করেন আবার কেউ কেউ সাগরের তীরে রাখা বড় বড়  লঞ্চে আশ্রয় নেন । ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল মোতাবেক ৮৯৭ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল মসজিদ গুলোতে মুসলমান নর-নারী ও শিশুরা নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে কাঁদছে তখন রাতের আঁধারে মসজিদগুলো তালা লাগিয়ে দেয়া হয় এবং ভিতরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আর যারা সাগর পাড়ি দিয়ে মরোক্কসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের তীরে রাখা লঞ্চে অবস্থান করলেন তখন তাদেরকে লঞ্চ ডুবিয়ে পানিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন এক সাথে সাত লক্ষ মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনদিন পর্যন্ত চলে হত্যার উৎসব। সে দিন অসহায় নর-নারী ও শিশুদের বুক ফাটা আর্ত চিৎকারে পৃথিবীর বাতাস মুখরিত হয়েছিল। মুসলমানদের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছিল স্পেনের পুরো জমিন। মুসলমানদের রক্তে সাগরের পানি থৈথৈ করছিল।
এই গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফার্ডিনান্ডের ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেন। তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। ইতিহাস বলে, তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোকই জীবিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের গহিন অতলে হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য। এভাবেই মুসলিম আন্দালুসিয়া আধুনিক স্পেনের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের দুঃখ হয়ে বেঁচে আছে। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে এক মুসলিম সেনাপতি মূসা যে রাজ্যের পত্তন করেন ৭৮০ বছর পরে ১৪৯২ সালে ঐ নামের আরেক সেনাপতির হাতে একই রাজ্যের পতন ঘটে। দাউ দাউ করা আগুন, নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকার, নিরপরাধ মুসলমানের পুড়ে অঙ্গার হওয়া, পানিতে ডুবন্ত মানুষের মর্মান্তিকভাবে নিঃশব্দে মৃত্যু আর ফার্ডিন্যান্ড-ইসাবেলার হাসি একাকার হয়ে যায় ইউরোপের আকাশে-বাতাসে। হত্যাপর্ব শেষ হওয়ার পরপর-ই লাশপোড়া গন্ধে অভিভূত মুসলমানদের দুশমন খ্রিষ্টান ফার্ডিন্যান্ড আনন্দে আত্মহারা হয়ে তার স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে অট্টহাসি দিয়ে চিৎকার করে বলেছিল, হে মুসলমানগণ ! তোমরা কতইনা বোকা। মুসলমান তোমরা কতই না বোকা জাতি। সেদিন যে ইউরোপে মুসলমানরা বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল এক রাতের পার্থক্যে সেই ইউরোপ থেকে ইসলাম উৎখাত হয়ে গিয়েছিল সেই ইউরোপে আজও ইসলাম আর বিজয়ী হতে পারেনি। পুড়ে যাওয়া সুদৃশ্য মসজিদ গুলোকেও গীর্জা আর জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে।একদিন যে কর্ডোভা ও গ্রানাডার মসজিদগুলো থেকে পাঁচ ওয়াক্ত আযান ধ্বনিত হত, আন্দোলিত হত স্পেনের মুসলিমদের হৃদয়, আজ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সব গীর্জার স্তম্ভ।
৪.পহেলা এপ্রিল : মানবতার মৃত্যুঃ
যখন গোটা ইউরোপের ক্রান্তিকাল চলছিল, মুসলিম রণক্ষেত্রে কমান্ডার প্রধান ছিলেন মূসা বিন নুসায়ের। তিনি তখন দক্ষিণ মরেক্কো জয় করে কায়রোয়ানে অবস্থান করছিল। তখন তার সাথে কাউন্টার রাজা জুলিয়ান সাক্ষাত করে মাজলুম মানবতাকে রক্ষা করার জন্য আহ্বান করেন। মূসা বিন নুসায তার অধিনের সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে ৭,০০০ (সাত হাজার) সৈন্যের একটি মুজাহিদ বাহিনি প্রেরণ করেন। শুরু হয় খ্রিস্টানদের সাথে প্রচন্ড লড়াই। মর্মস্পর্শী তাকবীর ধ্বনিতে মূখরিত হয় আকাশ বাতাস। দীর্ঘ জিহাদের পর খ্রিস্টান বাহিনি পর্যদস্তু হয়। একের পর এক স্পেনের সকল শহর করায়ত্ব হয় মুসলমানদের। সলিল সমাধি হয় জালিম শাসকের। ৭১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার উমাইয়াা শাসনামলে ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের সৈন্যদল ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে রাজা রডরিককে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন। রাজা রডরিকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের। স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল না। রডরিক পলায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের পানিতে। এরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, কর্ডোভা। অল্প দিনেই অধিকৃত হলো থিয়োডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াস। এদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পূর্বদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও মেরিজ। তিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গে। তারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকে। জয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, বার্সিলোনা এবং পিরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন।
স্পেনে মুসলিম শাসন শুরুর পর সমগ্র ইউরোপে খুব দ্রুত ইসলাম ধর্মের বিকাশ লাভ করতে থাকে। তারিক বিন যিয়াদের মৃত্যুর পরও স্পেনের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি,অর্থনীতি, দর্শন, শিক্ষা-গবেষনা ও সভ্যতার উচ্চ শিখরে ছিল। শিক্ষা-সাংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-বাণিজ্যে ইত্যাদির কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনিত হয়েছিল স্পেন। মুসলিম শাসনের সময় স্পেনের রাজধানী ছিল গ্রানাডা এবং তার অপর প্রধান শহর ছিল হামরা প্রাসাদ, গ্রান্ড মসজিদ আজো মানুষদের কাছে বিস্ময়কর স্থাপত্য। কর্ডোভায় গড়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রসমূহ। বিশ্বের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে ওঠে কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়। সারা ইউরোপ থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে জড়ো হয় মুসলিম জগতের সহায়তায় গড়ে ওঠা জ্ঞান-বিজ্ঞারে সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। আজ যেমন লোকেরা হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডে যায়, তখন তারা যেত কর্ডোভায়। এ বাতিঘর থেকে আলোকিত হয়েই আধুনিক ইউরোপের উদ্দীপক ঘটনা শিল্প  বিপ্লবের নায়কেরা নিজ নিজ দেশে শিল্প গবেষণা ও উন্নয়নের রেনেসাঁর সূচনা করেন। এভাবে মুসলিমদের সুশাসনে স্পেন হয়ে উঠে ইউরোপসহ সারা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
মুসলমানদের আয়ত্ত্বাধীন ছিল গ্রানাডা, কর্ডোভা, সেভিল, জাভিতা সহ অসংখ্য অঞ্চল। ৮ম-১৫শ শতাব্দী, ৭১১ খ্রি. থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০০ বছরের শাসনামলে মুসলমান স্পেনকে পরিণত করেছিল জ্ঞান বিজ্ঞানের এক স্বর্গ রাজ্যে।  এ দীর্ঘ সময়ে মুসলমানেরা স্পেনের বর্বর চেহারা সম্পূর্ণ সভ্যতার আলোকে উদ্ভাসিত করেন। তাদের ন্যায়-ইনসাফ আর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে আশ্রয় নেয় ইসলামের ছায়াতলে। স্পেনের গ্রানাডায় বর্তমান যে লাইব্রেরীটি এই লাইব্রেরীর প্রায় ৬ লক্ষেরও অধিক বই সংগ্রহ করেছিল মুসলমানেরা। মুসলিম স্পেনে সাধারণ জনগণকে বই ধার দেয়ার জন্য লাইব্রেরী ছিলো। বলা হয়ে থাকে যে শুধু স্পেনের খলিফার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতেই চল্লিশ হাজার গ্রন্থ ছিলো। সে পরিমাণ গ্রন্থ তখন সারা ইউরোপেও ছিলো না। কোন কোন পশ্চিমা পন্ডিতের মতে – ইউরোপের সেরা লাইব্রেরীতে তখন বড়জোর কয়েক ডজন বাইবেল-সংক্রান্ত বই পাওয়া যেতো। এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ মুসলমানরা কাগজ তৈরির প্রযুক্তি চীনাদের কাছ থেকে লাভ করেছিলো। মুসলমানদের চার‘শ বছর পর অমুসলিম ইউরোপীয়ানরা স্পেনের মুসলমানদের কাছ থেকে কাগজ তৈরি করা শিখে। আধুনিক ইউরোপ যে সমস্ত আচার-আচরণ, রীতিনীতি বা সদগুণের জন্য বড়াই করে সেগুলো বহুলাংশে মুসলিম স্পেন থেকে আমদানি হয়েছে। কূটনীতি, মুক্ত-বাণিজ্য, খোলা-সীমান্ত, শিক্ষা-গবেষণা, নৃতত্বের পদ্ধতি, আচরণ, ফ্যাশন, বিভিন্ন ধরণের ঔষধ, হাসপাতাল ইত্যাদি সবকিছু কর্ডোভা থেকে এসেছে।
মুসলমান শাসন আমলে স্পেনের নাগরিকরা পেয়েছিল একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র, যেখানে নারীরা তাদের অধিকারের জন্য কোন আন্দোলন করতে হতোনা, গরিব- অসহায় মানুষজন খাবারের অভাবে ধুকে ধুকে মরতে হতোনা, ধনি-গরীবের কোন তারতম্য ছিলনা, জোড় করে ধর্মান্তরিত করণ নামক শব্দের সাথে কেউ পরিচিত ছিলনা, ন্যায় বিচারের জন্য বিচারকের দ্বারে দ্বারে কোন মানুষকে দৌড়াতে হতোনা, শিশু,নারী,বৃদ্ধদের অধিকার বিষয়ে কাউকে কথা বলতে হতো না। সর্বোপরি বিরাজ করছিল শান্তি এবং সুশাসন। স্পেনের সুশাসনের প্রভাব যখন বাইরের রাষ্ট্রগুলোতে পড়তে লাগলো, ইউরোপীয় নাগরিকরা যখন ইসলামকে জানার সুযোগ পেল তখন টনক নড়ে উঠল কট্টরপন্থী খ্রিষ্টানদের। মুসলমানদের ধ্বংস করার পকিল্পনার অংশ হিসাবে স্পেন থেকে মুসলমানদেরকে চির উৎখাত করার লক্ষ্যে হিংসুক খৃষ্টান গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠে।
ইসলামকে ইউরোপ থেকে চিরতরে নির্বাসনে দেওয়ার জন্য নানা চক্রান্ত শুরু হয়। খ্রিষ্টান পাদ্রীরা রাজা ফার্ডিনেন্ডকে পরামর্শ দেয় যে, মুসলমানদের ভিতর থেকে এমন কিছু মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে যারা পার্থিব বিষয়ে খুবই চিন্তাশীল।রাজা ফার্ডিনেন্ড তাই করল, সারা স্পেন থেকে কিছু মুসলিমকে খুঁজে বের করল যেখানে অনেক আলেমও ছিল। রাজা এই সকল মুসলমানদের কিনে নিল এবং এই সংখ্যাটাকে আরো ভারী করার প্রয়াস অব্যাহত লাগল। যে সকল মুসলমানদেরকে তারা কিনে নিয়েছে তাদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়। তাদের কাজ ছিল মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার জন্য কিছু ধর্মীয় কাজ সৃষ্টি করা এবং বাদশাহ আবুল হাসানের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলা। সেই সাথে তারা বিচক্ষণ মুসলিম আলেমদের অপহরণ করে হত্যা করত। ফার্ডিনেন্ডের পাতা ফাঁদে না বুঝেই পা ফেলল স্বয়ং বাদশাহ আবুল হাসানের পুত্র আবদুল্লাহ এবং ছোট রাণী তথা আবদুল্লাহর মা।পর্তুগীজ রানী ইসাবেলা ও তার স্বামী রাজা ফার্ডিন্যান্ড মুসলিমদের হত্যা করার নিমিত্তে চক্রান্ত করলে অন্যান্য খৃষ্টান রাজারাও তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় হাত সম্প্রসারণ করে। ফার্ডিনেন্ডের গুপ্তচরেরা বাদশার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করল। এভাবে দেশ ব্যাপী প্রায় দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে চলা ষড়যন্ত্রে স্পেনের মুসলমাদের ঈমান বিনষ্ট হয়ে গেল। স্পেনের সর্বশেষ নেতৃত্ব বাদশাহর ভাতিজা মুসা বিন আবি গাসসানকে গুম করে হত্যা করা হয়। কিছু মধ্যম সারির আলেমরা যাদের ঈমান মজবুত ছিল তারা জণগনকে বুঝাতে চাইলেও ফার্ডিনেন্ডের ষড়যন্ত্র এত বেশী বিস্তৃত ছিলো যে সকলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
৫. স্পেনের ইতিহাস : একটি পর্যালোচনাঃ
একদিকে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের স্পেন বিজয় করেছিলেন। আরেকদিকে মুসলিম সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পিরিনিজ পর্বতে দাঁড়িয়ে সমগ্র ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন আঁকছিলেন। আর স্পেন থেকে বিতাড়িত গথ সম্প্রদায়ের নেতারা পিরিনিজের ওপারে স্পেন পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা আঁটছিলেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ইউরোপের খ্রিস্টান নেতারা। মুসলমানরা পিরেনিজ অতিক্রম করে ফ্রান্সের অনেক এলাকা জয় করেন। কিন্তু অ্যাকুইটেনের রাজধানী টুলুর যুদ্ধে ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়ে তারা বুঝতে পারলেন যে, অসির পরিবর্তে মসির যুদ্ধের মাধ্যমেই ইউরোপ জয় করা সহজতর। এরপর মুসলমানদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও বিস্তারে। তারা সেই যুদ্ধে সফল হন এবং প্রণিধানযোগ্য ইতিহাস তাদের বিজয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে খ্রিস্টীয় শক্তি পুরনো পথ ধরেই হাঁটতে থাকে। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে মাসারার যুদ্ধের পর থেকে স্পেনের ওপর তাদের নানামুখী আগ্রাসন ও সন্ত্রাস চলতে থাকে। ফলে স্পেনের নিরাপত্তা হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু স্পেনের ভেতরে পচন ধরার প্রাথমিক সূত্রগুলো তৈরি হচ্ছিল ধীরে ধীরে। সমাজের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বোধ ও সচেতনতা ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করছিল। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র বিভাজনের কান্ডজ্ঞান থেকে সরে আসছিল দূরে। এদিকে ইউরোপের আকাশে ক্রুসেডের গর্জন শোনা যাচ্ছে। স্পেনের বিরুদ্ধে যে আক্রোশ কাজ করছিল সেটাই তিনশ’ বছরে পরিপুষ্ট হয়ে ১০৯৭ সালে গোটা ইসলামী দুনিয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ভয়াবহ তুফানের মতো। ১০৯৮-এর জুনে এন্টিয়ক দখলের সাফল্যজনক কিন্তু নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠা এ তুফান ১২৫০ সালে অষ্টম ক্রুসেডের পরিসমাপ্তির পর স্পেনের দিকে মোড় ঘোরায়। স্পেনে তখন সামাজিক সংহতি ভঙ্গুর। খ্রিস্টান গোয়েন্দারা ইসলাম ধর্ম শিখে আলেম লেবাসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও করছে। তাদের কাজ ছিলো স্পেনের সমাজ জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
১৪৬৯ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা স্পেনে মুসলিম সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৪৮৩ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা প্রদেশে। যাদের প্রতি হুকুম ছিল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া, জলপাই ও দ্রাক্ষা গাছ কেটে ফেলা, সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ধ্বংস করা, গবাদিপশু তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সেই সময় মৃত্যু ঘটে স্পেনের শাসক আবুল হাসান আলীর। শাসক হন আজজাগাল। এক পর্যায়ে প্রাণরক্ষা ও নিরাপত্তার অঙ্গীকারের ওপর নগরীর লোকেরা আত্মসমর্পণ করলেও নগরী জয় করেই ফার্ডিনান্ড চালান গণহত্যা। দাস বানিয়ে ফেলেন জীবিত অধিবাসীদের। এরপর ফার্ডিনান্ড নতুন কোনো এলাকা বিজিত হলে বোয়াবদিলকে এর শাসক বানাবে বলে অঙ্গীকার করে। ৪ডিসেম্বর ১৪৮৯। আক্রান্ত হয় বেজার নগরী। আজজাগাল দৃঢ়ভাবে শত্রুদের প্রতিহত করলেন। কিন্তু ফার্ডিনান্ডের কৌশলে খাদ্যাভাব ঘটে শহরে। ফলে শহরের অধিবাসী নিরাপত্তা ও প্রাণরক্ষার শর্তে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু তাদের ওপর চলে নৃশংস নির্মমতা। আজজাগাল রুখে দাঁড়ালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে করা হয় আফ্রিকায় নির্বাসিত।
ডিসেম্বর ১৪৯১-এ গ্রানাডার আত্মসর্মপণের র্শত নির্ধারিত হলো। বলা হলো : ‘ছোট-বড় সব মুসলমানের জীবনের সর্ম্পূণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। তাদের মুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম করতে দেয়া হবে। তাদের মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অক্ষত থাকবে। তাদের আদব-কায়দা, আচার-ব্যবহার, রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ অব্যাহত থাকবে। তাদের নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী তাদের প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন…।’ আত্মসর্মপণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন মুসা বিন আকিল। তিনি বললেন, গ্রানাডাবাসী! এটা একটা প্রতারণা। আমাদের অঙ্গারে পরিণত করার জ্বালানি কাঠ হচ্ছে এ অঙ্গীকার। সুতরাং প্রতিরোধ! প্রতিরোধ!! কিন্তু গ্রানাডার দিন শেষ হয়ে আসছিল। ১৪৯২ সালে গ্রানাডাবাসী আত্মসর্মপণ করল।
৬.  স্পেনের ইতিহাস: মুসলিম উম্মাহর অনুপ্রেরণার অসাধারণ উৎস
স্পেন জয়ের ঘটনাটি ঘটে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে। মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে রাজা রড্রিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। রাজা রডরিকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের কাল। জনগণ ছিল রডরিক ও গথ সম্প্রদায়ের উত্পীড়নে অসহায় শিকার। মরণের আগে স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল না। তারেকের অভিযানের ফলে মুক্তির পথ বেরুবে, এই ছিল সাধারণ মানুষের ভাবনা। তারা তারেক বিন যিয়াদকে আর্শীবাদ হিসেবে গ্রহণ করল ৩০ এপ্রিল, ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার। রডরিক পালায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের পানিতে। এরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, র্কডোভা। অল্পদিনেই অধিকৃত হলো থিয়োাডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াস। এদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর র্পূবদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও মেরিজ। তিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গে। তারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকে। জয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, র্বাসেলোনা এবং পিরিনেজ পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন।
এ হলো খৃস্টানদের এপ্রিল ফুলের ইতিহাস। ইসলামে যদি আনন্দ –   উল্লাসের নামে মিথ্যা বলার অনুমতি থাকত তা  হলেও এ দিনে কোনো মুসলিম আনন্দ করতে পারতেন না। কারণ,  তা হল মূর্তিপুজকদের  উৎসবের অংশ ও অনুকরণ। দ্বিতীয়ত এ দিবসটি মুসলিমদের জন্য দুঃখের ও প্রতিবাদের দিন, আনন্দের নয়।
 লেখকঃ গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক ও সংগঠক, কুমিল্লা । মোবাইলঃ০১৭১৮-২২৮৪৪৬
শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন