কাজী খোরশেদ আলম
নাজমুল সবুজ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকতো। তাকে দেখলেই মনে হয়-একটি ফুটন্ত গোলাপ যেন হাসছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়ার সময় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছে। তার সাথে আমার তখনো পরিচয় হয়নি।
আমরা যখন বুড়িচং প্রেস ক্লাবের নির্বাচন করি তখনো সে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকায় দায়িত্বরত আছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে বুড়িচং প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা এবং বন্ধু মাইটিভির কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি আবু মুসার হাত ধরে খোলা কাগজের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করে এবং বুড়িচং প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। তখন থেকে তার সাথে আমার পরিচয় কিন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে চলাচল হয় নি। আবু মুসা, মারুফ কল্প, সাফি, জহিরুল হক বাবু, মাহফুজ নান্টু তারা এক সাথেই কুমিল্লার অলিগলি চষে বেড়িয়েছে। তাদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল। নাজমুল সবুজের সাথে আমার দেখা হতো অথবা কথা হতো আমাদের ক্লাবের কোন প্রোগ্রাম বা মিটিং থাকলে। সে আমাদের সাথে জড়িত হয়-বুড়িচং প্রেস ক্লাবের উদ্দ্যোগে মায়ামিতে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে। তারপর আরোও কয়েকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করেছে। কিন্ত তাকে দেখে কখনো বুঝা যায়নি-যে সে অকালেই চলে যাবে। তার বাহিরে অংশটি দেখে কেউ বুঝতে পারে নি যে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে। সব সময় হাসি খুশিতে থাকা ছিল তার স্বভাব। এভাবে আমাদের কে ছেড়ে যাবে তা আমরা কেউ কল্পনা করতে পারি নাই।
আজ সকালে যখন প্রেস ক্লাবের সদস্য মিজানুর রহমান ফোন করে বলল-ভাই। নাজমুল সবুজের জানাযার নামাজ সকাল ১০টায় ময়নামতিতে অনুষ্ঠিত হবে। তখন যেন আকাশ থেকে পড়েছি। শরীরের মধ্যে কেমন যেন কাপনি শুরু হয়েছে। কি হলো? কিভাবে হলো? কিছুই ভাবতে পারছি না। ফজরের নামাজ পড়ে শুযে থাকা আমার পুরাতন একটি খারাপ অভ্যাস। আর এই অভ্যাসের কারণে শরীরে ডায়াবেটিস নামক রোগের আর্বিভাব হয়েছে। তবু শুয়ে থাকি। কবে যেন আমারো ডাক আসে পরপারে যাওয়ার তার ঠিক ঠিকানা নেই। তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে ছুটাছুটি করছি। হই চই করছি। কিন্ত দেহ থেকে প্রানটা যখন বের হয়ে যাবে-তখন সঙ্গী সাথি বলতে কেউ থাকবে না। তবু কত অহংকার নিয়ে ছুটে বেড়াই। যেন পৃথিবীটা পায়ের নিচে আছে। আমি তার মাথায় বসে আছি।
মিজানের ফোন পেয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে রওনা হয়ে গেলাম-ময়নামতির উদ্যোশে। সাংবাদিক মারুফ হোসেনকে ফোন দিলাম। সে তখন বুড়িচংয়ে টিউশনিতে ব্যস্তছিল। ফোন দেওয়ার সাথে সাথে বলল-ভাই, আমি রেডি আছি। আপনি আসেন। তার বাইকে চরে চলে গেলাম ময়নামতি রামপাল এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখি আবু মুসার চোখে জল, আরেক পাশে মাহফুজ নান্টু হাউ-মাউ করে কাঁদছে। জহিরুল হক বাবুসহ অনেকেই তখন উপস্থিত হয়েছে। গীতি কবি আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয় ইতিমধ্যে কয়েক বার ফোন করে লোকেশনের খোঁজ খবর নিল।
নাহার ভিলার পাশে দেখতে পেলাম লাশবাহী এম্ব্যুলেন্সে ঘুমিয়ে আছে নাজমুল সবুজ। চিরনিদ্রায় শায়িত আমাদের ফুটন্ত গোলাম। যেন শান্ত শিষ্ট শিশুটি ঘুমিয়ে আছে মায়ের কোলে। কখন জানি চোখের কোন ভেসে জলরাশিগুলো ছুটে চলল-তা বলতে পারবো না। আমাদের মাঝ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেল একটি তরতাজা প্রাণ-সাংবাদিক জগতের ফুটন্ত গোলাপ।
কমেন্ট করুন