স্টাফ রিপোর্টার:
রহস্যময়ী গোমতী নদী প্রতি বছর কারো প্রাণ না নিলে যেন তার আত্মতৃপ্তি মিটে না। প্রতি বছর দুই তিন জনের জীবন লীলা সাঙ্গ করে ক্ষান্ত হয়। গোমতীর পাড়ের মানুষের মুখে শোনা যায় কত কল্প কথা। গঙ্গীমা নাকি বেয়াদবী সহ্য করতে পারে না। তাই গোমতী নদীতে নামতে হলে গঙ্গীমার না নিয়ে আল্লাহ রসূলের দোহাই দিয়ে নামতে হয়। অন্যথায় যে কোন সময় যে কারো প্রাণ বিণাস হতে পারে।
এভাবে প্রতি বছর গোমতী নদীর কোন না কোন অংশে মাছ ধরতে নেমে কিংবা গোসল করতে নেমে অথবা সাতার কাটতে নেমে অনেকে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওযার কয়েক ঘন্টা পর অথবা একদিন পর লাশ পাওয়া যায়। কিংবা লাশ ভেসে উঠে। গোমতীর এই রহস্যময়ী বিষয় কেউ বলতে পারে না। এখন গোমতী প্রায় মরা নদী। নেই তার পূর্বের মতো স্রোত। তবু কিভাবে যেন মানুষগুলো নিয়ে যায়। সেই রহস্যর জুট আজও খোলে নি। তবে গোমতীর পাড়ের মানুষেরা বলে গঙ্গীমায় নিয়ে যায়।
এভাবে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামনগর এলাকায় গোমতী নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোজের ২৪ ঘন্টার পর সোমবার বেলা ২ টায় ফারহান আহমেদ সিয়াম (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সে বুড়িচং মডেল একাডেমির নবম শ্রেনির শিক্ষার্থী। বুড়িচং উপজেলা সদরের দক্ষিন পাড়া এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন বাবরের ছেলে।
রবিবার দুপুর ২ টায় গোমতী নদীতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় সে। পরে সোমবার দুপুর ২ টায় বুড়িচং ফায়ার স্টেশনের সহযোগীতায় চাঁদপুর থেকে আসা ডুবুরিদল সিয়ামের লাশ উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা।
সিয়ামের মামাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বাঁধন জানান, সিয়ামের ফুফাত ভাই একাদশ শ্রেণির ছাত্র তানভিরের বন্ধু নাঈমদের বাড়ী রামনগর গ্রামে তার বেড়াতে যায়। পরে নাইম ও তানভীরসহ অন্যরা পাশের গোমতী নদীতে গোসল করতে যায়। এ সময় সিয়ামও নদীতে গোসল করতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে তাকে সবাই বারণ করে। পরে সিয়াম কারো বারণ না মেনে নদীতে গোসল করতে নেমে পরে।
সিয়ামের মামাতো ভাই বাঁধন আরো জানান, সিয়াম অন্যান্যদের সাথে সাতার কেটে নদীর ওইপাড় যায়। আসার সময় অন্য তিনজন নদীর এপাড়ে পৌঁছালেও সিয়াম নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। পরে বহু খোঁজাখুজি করেও সিয়ামকে আর পাওয়া যায় নি।
এদিকে সিয়াম নদীতে হারিয়ে গেছে এমন খবরে সিয়ামের মা ও সিয়ামের স্বজনরা রবিবার থেকে নদীরপাড়ে ছিলেন।
সিয়ামের মা ফাহিমা আক্তার রুমা জানান, তার দুই ছেলের মধ্যে সিয়াম ছোট। বড় ছেলেটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সিয়ামের বাবা জহির উদ্দিন বাবর প্রবাসী। ছেলে হারিয়ে মা ফাহিমা আক্তার রুমা ডুকরে কেঁদে উঠছেন।
বুড়িচং থানার এস আই মামুন জানান, সোমবার বেলা ২ টায় সিয়ামের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
কমেন্ট করুন