ভারতে মুসলিমদের চলমান নানা ইস্যু নিয়ে বৈঠক ও ফিকহি সেমিনার করেছে দেশটির শীর্ষ আলেমরা। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের ঐতিহাসিক ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা- লক্ষ্মৌতে দুই দিনব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নদওয়াতুল উলামার শিক্ষাসচিব মাওলানা রাবে হাসানি নদভীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি, মুফতি আতিক বাস্তাবি, ড. রেজা নদভি, কাশ্মিরের প্রধান মুফতি রাশেদ হুসাইন নদভি, মুফতি নজির আহমাদ, নদওয়াতুল উলামার পরিচালক ড. সাইদুর রহমান আজমি, বেলাল হাসানি নদভি, খালেদ গাজিপুরী, আব্দুল আজীজ ভটকালি প্রমুখ। অনুষ্ঠানটির সঞ্চাচালন করেন মুফতি জফর আলম নদভি। পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা ত্বহা নদভি।
বৈঠক শেষে দেশটির বহুভাষী মিডিয়া ইটিভি ভারতকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি মুসলিমদের সাথে সম্পর্কিত চলমান নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি আলোচিত ইউনিফর্ম সিভিল কোড (সব ধর্মের মানুষের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি আইন) সম্পর্কে দাবি করেন, ‘এটি দেশের জন্য উপকারী নয়। এ আইন বাস্তবায়ন হলে কেবল মুসলিমরা নয়, দেশের অন্য ধর্মের লোকজনও ভীষণ বিপাকে পড়বে।’ এ সময় তিনি ইউনিফর্ম সিভিল কোড বাস্তবায়নে কেবল রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তিরই স্বার্থ সিদ্ধি হবে বলেও উল্লেখ করেন।
ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রতি অনুৎসাহিত করে মাওলানা রাহমানি বলেন, ‘সরকার যদি এ আইন বাস্তবায়ন করেও ফেলে, তথাপি আমরা প্রত্যেক ধর্মের লোকজনকে নিজ নিজ ধর্মের দেওয়ানি আইন মেনে চলার পরামর্শ দেব।’
সেমিনারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’র জেনারেল সেক্রেটারি ইটিবি ভারতকে বলেন, ‘এ সেমিনারে আজ আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তন্মধ্যে অন্যতম হলো সুদ। যেহেতু ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্কিমের অধীনে সুদের আবশ্যকীয় সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাই এ ধরনের ক্ষেত্রে সুদে কোনো ছাড় দেয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় হবে। আমরা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সম্মিলিত সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করব।’
এ সময় ইসলামি বিধিবিধানের পরিব্যাপ্তি উল্লেখ করে রাহমানি বলেন, ‘ইসলাম কেবল মসজিদ কেন্দ্রিক ধর্ম ও মতাদর্শের নাম নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের সপ্রজ্ঞ নির্দেশনা।’
পাবলিক প্লেসে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি বলেন, ‘বর্তমানে পাবলিক প্লেসে নাম পড়াকে কেন্দ্র নানা হাঙ্গামার খবর পাওয়া যায়। অথচ কিছু দিন আগেও এমন অবস্থা ছিল না। হিন্দুরাও তখন নামাজিদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিত। তারা নামাজিদের সম্মান করত।’
নামাজের স্থান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে রাহমানি বলেন, ইসলাম এমন স্থানে নামাজ পড়তে নিষেধ করে, যেখানে অপর মানুষের কষ্ট হয়। সেজন্য কোনো পাবলিক প্লেসে যদি নামাজ পড়ার কারণে অন্যরা বিড়ম্বনায় পড়ে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সম্প্রতি খুলা (অর্থ দিয়ে স্বামী থেকে তালাক নেয়া) বিষয়ে কেরালা হাইকোর্টের দেয়া এক রায়ের সমালোচনা করে রাহমানি বলেন, ‘অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল-এর লিগ্যাল কমিটি এই রায় নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা করেছে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট করা যায়নি। স্বাভাবিকভাবে মনে হচ্ছে, আদালত বলতে চাচ্ছে, খুলার জন্য স্ত্রীর দাবিই যথেষ্ঠ। স্বামীর সম্মতি জরুরি নয়। যদি আদালতের ফায়সালা এমনই হয়, তবে তা ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী। ইসলাম বলে, খুলার জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মতি জরুরি।’
সূত্র : ইটিভি ভারত
কমেন্ট করুন