শহরে ভোগ-বিলাসী জীবনযাপনের প্রধান উপাদানগুলোই আসে গ্রাম থেকে। গ্রামের মাছ, মুরগি, ডিম, হাঁস, কবুতর, গবাদি পশু, শাকসবজি, ধান-চাল থেকে শুরু করে জীবন ধারণের অন্যতম উপাদানগুলোর উৎসই হচ্ছে আমাদের গ্রাম। সেই গ্রামকে অবহেলা করে, গ্রামের উন্নয়নকে উপেক্ষা করে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের আধুনিক শহুরে সভ্যতায় পালিত পিঠা মেলা, বৈশাখী উৎসব, লোকজ উৎসব এবং মেলাগুলো কিন্তু প্রাচীন ও চিরায়ত গ্রামীণ ঐতিহ্য। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ৪ নং সুবিল ইউনিয়নের একটি গ্রাম ওয়াহেদপুর। আমি এই গ্রামের ছেলে। সবুজ শ্যামল এই গ্রামটির পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদী। এই নদীর কারণে গ্রামটি যেন এক অপরূপ সৌন্দর্য্য। আমার গ্রামে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ওয়াহেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদরাসা (ওয়াহেদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা) ছেলেমেয়েদের সুস্থ শারীরিক বিকাশের জন্য রয়েছে একটি খেলার মাঠ, একটি ঐতিহ্যবাহী কালাই শাহ’র মাজার, হাফেজী মাদরাসা, মসজিদ ও মন্দির। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বহুকাল ধরে এখানে মিলেমিশে সুসম্পর্কের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। প্রতিবছর চৈত্র মাসে গ্রামে মেলা বসে,ছোটবেলায় এই মেলা দেখতে যেতাম। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসত এই মেলা দেখতে। মেলায় গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি ফুটে উঠত। এখনও এই মেলা প্রতিবছর বসে। কৃষি সম্মৃদ্ধ একটি গ্রাম। বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদনই যেখানে অনেকের জীবন ধারণ বা জীবিকার উৎস। গ্রামটি উপজেলা কাছাকাছি হওয়ায় নাগরিক সুযোগ–সুবিধা বেশ ভালো পাওয়া যায় আর সে কারণেই এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে গ্রামের মানুষজনের জীবন যাত্রার মান । শিক্ষায় পিছনে নেই এই গ্রামটি। বর্তমানে এই গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েরা দেশ–বিদেশে পড়াশোনা করছে। আমার গ্রাম অনেক সুন্দর। এই গ্রামের বাসিন্দা হিসাবে আমি গর্বিত।এখানে আমি হাঁটি, ঘুরি। সবুজের সমারোহ।ভালোবাসি নিজের মাটি। চলতে চলতে থেমে যাই। আপনারা ঘুরতে আসবেন নাকি আমার গ্রামে ? সুন্দর গ্রামের মানুষ আমি। আপনারা এলে খুব খুশি হবো- আমার বারান্দার পাশে- প্রাণের দোয়েল। উৎসাহিত হওয়ার মতো ছবি-ফেসবুক বন্ধ দেখে ক্ষুব্ধ। গ্রামের সেই আঁকাবাঁকা মেঠো পথ একেবারে হারিয়ে না গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়ায় প্রধান সড়কগুলো এখন পাকা। বাজারের পাশ দিয়ে সেই পিচঢালা পথ দিয়ে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে ৪ নং সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়। পাশেই আছে পুকুর ও দিঘি। গ্রীষ্মে আম, জাম, কাঠাল, লিচুসহ হরেক রকম ফলের মৌ মৌ গন্ধ, বর্ষায় টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি, জোৎস্না মাখা রাত, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, সন্ধ্যাবেলায় জোনাকির ছড়াছড়ি হৃদয়ে এনে দেয় অন্যরকম অনুভূতি। আমি আমার নিজের শৈশব সম্পর্কে এটুকূ গর্ব করে বলতে পারি বেশ মজার ছিল আমার শৈশব। কারণ আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি গ্রামের পথে-প্রান্তরে,মাঠে-ঘাটে,গাছে-বাঁশে।আমার বাড়ীর এমন কোন গাছ ছিল না যেটাতে আমি উঠিনি। আর আমাদের গ্রামের একটা মজার ব্যপার ছিল সব কিছুতেই ভিন্ন ভিন্ন খেলা। সব কিছু মিলে বেশ হৈ-হুল্লুড করে শৈশব কাটিয়েছি।সেখানে কোন অপ্রাপ্তি কিংবা অপরিপূর্ণতা ছিল না। কানায় কানায় পরিপূর্ণতা আর অসীম প্রাপ্তির সমন্বয়ে আমার শৈশব। তখন যদিও এসবের তেমন মূল্যবোধ বুঝতাম না। কিন্তু জীবনের এই সময়টাতে এসে পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি মনে করতেই অকপটে ভেসে উঠে শৈশবের সময়টা। গ্রামের সবুজ পল্লীতে যার শৈশব কাটিয়েছেন সেই ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন,তার অবস্থান যেখানেই হোক সে বারেবারে চাইবে তার গ্রামের সবুজ প্রকৃতিতে ফিরে যেতে। আশার কথা হচ্ছে, গ্রামেও এখন অর্থপ্রবাহ বেড়েছে। গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতি সুবিধা ক্রমেই বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা।
লেখক, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।
কমেন্ট করুন