অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার কতদিন টিকবে এই হিসাব শুরু করেছে অনেকে। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো তিনি বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন। এর মধ্যে পেরিকাতানের বাইরের সব এমপির সমর্থনে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়েছেন আনোয়ার। আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জেও তিনি জিতেছেন। ঐক্য সরকারের অংশীদার দলগুলোর মধ্যে একটি সম্মত সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়েছে এর আগেই। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে কিছু সমালোচনা এলেও তা বড় ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি করেনি। আনোয়ার সমালোচনাকে গ্রাহ্য করছেন, তবে ‘প্রধানমন্ত্রী ইহুদিবাদের দালাল’ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন সমালোচনাকে তিনি জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছেন। এর পরও বেশ কিছু উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের সামনে। তার ঐক্য সরকার কতদিন স্থায়ী হবে সেই বিবেচনার ক্ষেত্রে এসব চ্যালেঞ্জ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ লিম কিট সিয়াং-এর মতে, আনোয়ার ও তার ঐক্য সরকারের দীর্ঘায়ু নির্ধারণ করবে ক্ষমতার প্রথম বছরে ছয়টি ‘টিকে থাকার পরীক্ষা’ কতটা ভালোভাবে পাস করেন তার ওপর। এর বাইরে আরো কতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে আনোয়ারের সামনে।
আনোয়ারের সরকারের জন্য প্রথম লিটমাস পরীক্ষাটি শুরু হয় ১৯ ডিসেম্বর দেওয়ান রাকয়াতের (সংসদ) উদ্বোধনের মাধ্যমে। ২২২ আসনের সংসদে ১৪৭ ভোট পেয়ে শাসক জোট মনোনীত স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এই নির্বাচনেই নিশ্চিত হয়ে যায় সমসংখ্যক ব্যবধানে আনোয়ার আস্থা ভোটে জিতে যাচ্ছেন। সেটিই বাস্তবে ঘটেছে আস্থা প্রস্তাব পাস হওয়ার পর। পেরিকাতান জোটে বারসাতু ও পাসের ৭৪ জন সংসদ সদস্যের বাইরে কেউই ঐক্য সরকারের বিপক্ষে ভোট দেবে না নিশ্চিত হয়ে বিভক্তি ভোট দাবি করেনি বিরোধী পক্ষ। এ অবস্থার পেছনে ঐক্য সরকারের শরিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা সমঝোতা স্মারকের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিম শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলায় নিজের করণীয় ঠিক করে নিয়েছেন বলে মনে হয়। তিনি নিজেই বলেছেন, এবারের সরকার পাকাতান হারাপানের সরকার নয়। এটি হলো জাতীয় ঐক্যের সরকার। ফলে এই সরকারের অংশীদার জোটগুলো ঠিক করবে কারা সেই জোটের মন্ত্রী হবেন। এভাবে মন্ত্রিসভা হওয়ায় সমালোচনা বা বিভক্তি বিভাজন কম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার প্রতি আস্থা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘এখন সময় কাজ করার এবং জনগণ যে পরিবর্তনগুলো কামনা করছে তা বাস্তবে রূপ দেয়ার।’
এর আগে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন) জোট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ারের নিয়োগের সমালোচনা করেছিল এবং সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদর্শন করার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিল। সংসদে আস্থা ভোটের পর সেই চ্যালেঞ্জ অকার্যকর হয়ে পড়ল।
আনোয়ারের সামনে এখন পরবর্তী পরীক্ষা হবে জোটের শরিক বারিসানের প্রধান দল উমনুর নেতৃত্ব নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য উমনুুর নেতৃত্ব নির্বাচন ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়। আগামী ১১-১৪ জানুয়ারি দলটির সাধারণ অধিবেশনে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। এতে দলের বর্তমান প্রধান ও উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদিকে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামাল উদ্দিন। উমনু সভাপতি দাতুক সেরি আহমেদ জাহিদ হামিদির জন্য নেতৃত্ব নির্বাচন একটি বড় পরীক্ষা, যাকে পাকাতান হারাপানের সাথে উমনু জোটের স্থপতি বলা হয়। গত সাধারণ নির্বাচনে বারিসান ন্যাশনালের পরাজয়ের পর তিনি দলের সভাপতি হিসাবে এমনকি দলের সদস্যদেরও সমালোচিত হন। কিন্তু সেটিকে অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত উমনুকে ঐক্য সরকারের অংশ বানাতে তিনি সক্ষম হন।
বলা বাহুল্য, আনোয়ারের ক্ষমতায় থাকার জন্য আহমদ জাহিদের প্রয়োজন আছে। প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সমর্থন করার জন্য উমনুতে আর কাকে বিশ্বাস করতে পারেন? যদি দলীয় ভোটে আহমেদ জাহিদ পরাজিত হন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন এমন একজন উমনু নেতা যিনি টিম জাহিদে নেই, সে ক্ষেত্রে আনোয়ার বারিসানের সমর্থন হারাতে পারেন।
ঐক্য সরকারের জন্য যে সমঝোতাস্মারক পাকাতান, বারিসান, জিপিএস, গাবুঙ্গান রাকয়াত সাবাহ (জিআরএস) এবং পার্টি ওয়ারিসান এর মধ্যে হয়েছে তা একটি ‘স্মারক’ মাত্র। এতে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর যেকোনো এমপি সরকারি প্রস্তাব সমর্থন করেন না করলে তিনি এমপি থাকার ব্যাপারে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। কিন্তু যেকোনো জোট বা দল সমঝোতা স্মারক থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।
অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, উমনুুর সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফল সত্ত্বেও (মাত্র ২৬টি আসনে জয়ী), আহমদ জাহিদ যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে উমনু সভাপতি হিসেবে জয়ী হবেন। এই মুহূর্তে, সেমব্রং এমপি দাতুক সেরি হিশামুদ্দিন হুসেইন বা খায়েরি জামালুদ্দিন প্রমুখ আহমদ জাহিদের বিরুদ্ধে গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারবেন না। দলের ওপর জাহিদের প্রভাব এখন অনেক শক্ত। তিনি পল্লী ও আঞ্চলিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপ্রধানমন্ত্রী, যিনি উমনু প্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এ কারণেই আনোয়ার দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জাহিদকে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছেন। আহমদ জাহিদের পৃষ্ঠপোষকতার একটি উদাহরণ হলো যেদিন কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকার-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে সব রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছিল, উমনুর প্রাক্তন মাচাং সংসদ-সদস্য দাতুক আহমদ জাজলান ইয়াকুবকে ফেলক্রা বেরহাদের চেয়ারম্যান হিসেবে সে দিন পুনরায় নিযুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে জাহিদ তার নেতৃত্বে সামনে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে অনেকখানি সফল হয়েছেন। সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রী হবার পর তার হারানো প্রভাব নতুন করে যুক্ত হওয়ায় দলীয় প্রধান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা জাহিদের জন্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
আনোয়ারের সামনে আরেক পরীক্ষা হিসেবে সামনে আনা হয় সংসদের উদ্বোধনের পর রাজকীয় ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস করা, যা কার্যকরভাবে বছরের জন্য সরকারের নীতি কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হয়। স্পিকার নির্বাচন ও আস্থা ভোটের পর এতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। ২০২৩ সালের বাজেটের অনুমোদন হবে ঐক্য সরকারের সামনে আরেক পরীক্ষা এবং সেটিও বড় কোনো সমস্যা হিসেবে আসবে না বলেই এখন মনে হচ্ছে।
আনোয়ারের ঐক্য সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পেনাং, সেলাঙ্গর, নেগ্রি সেম্বিলান, কেদাহ, কেলান্তান এবং তেরেঙ্গানু রাজ্যের নির্বাচন। পেনাং, সেলাঙ্গর, নেগ্রি সেম্বিলানে শাসক জোটের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বাকি তিনটিতে রয়েছে বিরোধী জোটের দলগুলো। এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচনের একটি সরকার পক্ষ এবং আরেকটিতে বিরোধী পক্ষ জয় পেয়েছে।
এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে এই রাজ্য নির্বাচনে শাসক ও বিরোধী দলগুলো জোটগতভাবে লড়বে। এটি হলে পেনাং এবং সেলাঙ্গরে ঐক্য সরকার নতুন করে সরকার গঠনে সক্ষম হতে পারে। অন্য দিকে কেলান্তান ও তেরাঙ্গানুতে পেরিকাতানের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কেদাহ এবং নেগরি সেম্বিলানে কি ফলাফল হয় সেটি দেখার বিষয়। একই সাথে অন্য রাজ্যগুলোতে বিপরীতপক্ষের আসন সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। পেরিকাতান ন্যাশনালের নেগ্রি সেম্বিলান চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন যে পিএন রাজ্যের ৩৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৯টি আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। কেদাহ রাজ্যে বিগত সংসদ নির্বাচনে পেরিকাতানের পক্ষে একটি ছাড়া সব আসনে জয় এসেছে। কেলান্তান ও তেরাঙ্গানুতে সব আসন পেয়েছে পেরিকাতান। এই ধারা যদি বজায় থাকে তাহলে এসব রাজ্যে বিরোধী পক্ষ জয় পাবে বলেই হিসাব করতে হবে। আর এই বার্তাও যাবে যে মালয় জনগণের মধ্যে পাস-বারাসাতুর আবেদন ঐক্য সরকার গঠনের পরও অব্যাহত রয়েছে।
ছয় রাজ্যের উপনির্বাচনের আগে সরকার আরো মাস ছয়েক সময় পেতে পারে। সরকারের প্রথম মাসটি প্রশাসনের অবয়ব প্রদান সংসদ অধিবেশন আহ্বান ও আস্থা ভোটের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরিয়ে গেছে। এখন সরকার জনগণের আশা আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কতটা কী স্বল্প মেয়াদে করতে পারছে তার ওপর রাজ্য নির্বাচনের ফল অনেকখানি নির্ভর করবে। আনোয়ারের প্রশাসন এ ক্ষেত্রে কয়েকটি অগ্রাধিকার সামনে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। যার মধ্যে প্রথম হলো, জাতিতাত্ত্বিক উত্তেজনা নিরসন করে সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত, জীবনযাত্রার ব্যয় আগের সরকারের সময় যেভাবে বেড়েছিল সেটি নিয়ন্ত্রণে এনে জনগণকে স্বস্তি দেয়া। তৃতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিশেষভাবে দেশী বিদেশী বিনিয়োগে গতি এনে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন চাঙ্গা করা। এ লক্ষ্য অর্জনে স্থিতিশীল সরকার গঠনের যে ভিত্তি প্রয়োজন সেটি আনোয়ার এর মধ্যে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। স্থানীয় মুদ্রা রিংগিতের দাম বাড়তে শুরু করেছে। শেয়ারবাজারের সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আবার মালয়েশিয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে মূল্য প্রটেকশনের একটি প্রক্রিয়া নিয়ে এর মধ্যে কাজ শুরু করেছেন আনোয়ার। এ ক্ষেত্রে সাফল্য এলে এর সুফল রাজ্য নির্বাচনে কিছুটা হলেও পাবেন আনোয়ার।
আনোয়ারের সামনে আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে। একটি হলো ক্ষমতার জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ সুলতানদের সমর্থন বজায় রাখা আর দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিধান করা। মালয়েশিয়ার ডিপ স্টেটের অসমর্থনকে এতদিন আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। এবার সেটিই আনোয়ারের সরকার গঠনে প্রধান সহায়ক হিসেবে দেখা গেছে। এর পেছনে একটি কারণ হতে পারে মালয় শাসকরা দেশটিতে স্থিতি এবং অর্থনৈতিক টেকসই অগ্রগতি দেখতে চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আনোয়ারের বিকল্প হয়তো বা তারা আর কারো মধ্যে পাননি।
সুলতানদের এই সমর্থন ঐক্য সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ভেতর থেকে শক্তি জুগিয়েছে। আনোয়ারের জোট বিগত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও পাকাতানের একক সরকার গঠনকে ডিপ স্টেট সমর্থন করতে চায়নি, সেটি হলে এতে চীনা প্রধান ডিএপির প্রভাব বাড়বে আশঙ্কায়। কিন্তু এখন ব্যাপকভিত্তিক ঐক্য সরকার গঠনের ফলে ডিএপির প্রভাব একদিকে সরকারে সীমিত হয়েছে, অন্য দিকে মালয় দল ও রাজনীতিবিদের নিয়ন্ত্রণ সরকারে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনোয়ার ইব্রাহিম এ বিষয়টি জানতেন বলে তিনি নির্বাচনে আগে থেকে মালয় প্রভাব বিশিষ্ট একটি সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত করছিলেন নিজেকে। এটি তার ঐক্য সরকারের প্রতি সমর্থন এবং সরকার গঠনে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। আর এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার রাজা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন আনোয়ার পেয়েছেন জহুরের প্রভাবশালী সুলতানের কাছ থেকে। তিনি সম্ভবত মালয়েশিয়ার পরবর্তী রাজা হতে যাচ্ছেন। আনোয়ার ইব্রাহিম মালয় শাসক ও মালয় স্বার্থের ব্যাপারে সজাগ থেকে সরকার চালালে এই সমর্থন তার পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে।
মালয়েশিয়ার ক্ষমতার রাজনীতিতে বাইরের প্রভাব অন্য অনেক দেশের তুলনায় একবারে প্রকাশ্য হয়ে ওঠে না। তবে দেশটির অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতনে বাইরের প্রভাব ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র বলয়, বৃহৎ প্রতিবেশী চীন এবং ওআইসির প্রভাবশালী দেশগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এবারের সরকার গঠনে চীনা প্রভাব খুব বড়ভাবে কাজ করেছে বলে মনে হয়নি। ওআইসির মধ্যে সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের অতি সক্রিয় কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। তবে মালয়েশিয়া পাসের মতো একটি ইসলামিস্ট দলের প্রাধান্য সম্বলিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি পাশ্চাত্য বলয় পছন্দ করেনি বলে মনে হয়েছে। এ কারণে পেরিকাতানের ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন সরকারকে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো বেশি পছন্দ করেছে বলে মনে হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিম পোড় খাওয়া এমন এক রাজনীতিবিদ যিনি মালয়েশিয়ার রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে যেমন বেশ ভালোভাবে বোঝেন তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণও ভালোভাবে উপলব্ধি করেন। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র নীতিতে চীনের চেয়েও পশ্চিমা বলয় বেশি গুরুত্ব পায়। আর একই সাথে ওয়াইসি দেশগুলোর মধ্যে একটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা থাকে মালয়েশিয়ার। আনোয়ার ইব্রাহিম এই ভূমিকায় আবার মালয়েশিয়াকে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে হয়। তবে তিনি মালয়েশিয়াকে বিশ্ব রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলবেন বলে মনে হয় না। পাশ্চাত্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা মালয়েশিয়ার জন্য অনুকূল হতে পারে; কিন্তু চীনের সাথে দক্ষিণ চীনসাগর বা তাইওয়ানকেন্দ্রিক যে সঙ্ঘাত পাশ্চত্যের সাথে চীনের উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাতে টুলস হিসেবে ব্যবহার হওয়ার ভূমিকায় আনোয়ার কুয়ালালামপুরকে নেবেন বলে মনে হয় না।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই টানাপড়েনে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং একটি পরিণামদর্শী নীতি গ্রহণ অভ্যন্তরীণ সুশাসনের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হতে পারে আনোয়ারের ঐক্য সরকারের স্থিতির জন্য।
mrkmmb@gmail.com
কমেন্ট করুন