কুমিল্লা প্রতিনিধি
গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষের স্ত্রী সেই পাংকু নারী অবশেষে আটক হয়ে জেলহাজতে গেল। কুমিল্লায় ১২ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মীকে মারধরের পর শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়ে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিনের বিরুদ্ধে। নির্যাতন সইতে না পেরে ভুক্তভোগী শিশুটি দোতলা থেকে লাফিয়ে আত্মরক্ষা করে। বর্তমানে সে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কুমিল্লার ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন পূর্ব দৌলতপুর এলাকার এস আর টি প্যালেসে এই ঘটনা ঘটে। মা-বাবাহীন ভুক্তভোগী শিশু সুমাইয়ার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে।
এই ঘটনায় বুধবার ৪ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। নির্যাতনের স্বীকার ভুক্তভোগীর মামা ইব্রাহীম খলিল কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।মামলার পর অভিযুক্ত নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তিনি জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই অভিযুক্ত তাহমিনা তুহিনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরদিন মামলার পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
ওসি আহমেদ সনজুর মোর্শেদ আরো জানান, মেয়েটির শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পা ঝলসে গেছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারধর করে গায়ে গরম পানি দেওয়ার সময় প্রাণ বাঁচাতে শিশু সুমাইয়া বাসার দোতলা থেকে লাফ দেয়। পরে পাশের ভবনের কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। পুলিশ এসে আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী জানায়, সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের মেয়ে ফাহমিদা তিমুর ঢাকার বাসা এবং আবু তাহেরের কুমিল্লার বাসায় চার বছর ধরে কাজ করছে সে। কাজে দেরি হলে তাহেরের স্ত্রী ও মেয়ে বেত দিয়ে মারধর করে এবং গরম পানি ঢালে। গত সোমবার গরম পানি ঢেলে পা ঝলসে দেয়। মঙ্গলবারও মারধরের পর গরম পানি ঢালতে গেলে দোতলা থেকে লাফ দেয় সে। এরপর পাশের মেয়েদের হোস্টেলে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
হোস্টেলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ওপরে চিৎকার শুনি এসে দেখি, ছোট একটি মেয়ে আমাদের রুমে ঢুকে আশ্রয় চাচ্ছে। তার পা ঝলসে গেছে। পরে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। আবু তাহেরের স্ত্রী তাহমিনা তুহিন মেয়েটিকে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয়দের বাধায় পারেননি।’
এ বিষয়ে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে। আমার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি দেবিদ্বারে তার বাড়ি। আমি ও আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ। কিছুদিন আগেও আইসিইউতে ছিলাম। মঙ্গলবার আমি বাইরে ছিলাম। আমার স্ত্রী জানিয়েছে, তাকে মারধর করেনি। সে পাপোশে পা পিছলে পড়ে গেলে একটু গরম পানি গায়ে পড়ে। পাশের হোস্টেলের একটি মেয়ে বিষয়টিকে বড় করেছে।’
কমেন্ট করুন