স্টাফ রিপোর্টার:
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় সরকার যখন জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় লকডাউন ঘোষনাসহ গণপরিবহন বন্ধ ঘোষনা করে,তখনই দেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থাকা প্রায় ৩’শতাধিক হোটেল, রেষ্টুরেণ্ট,ফাষ্টফুডসহ মিষ্টির দোকারগুলোর কমপক্ষে ৩০ হাজার মালিক,কর্মকর্তা,কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ৫ এপ্রিল থেকে এক সাপ্তাহের লকডাউনের পর ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফা কঠোর লকডাউনের ঘোষনায় কার্যতঃ মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে এই অবস্থা।
সরেজমিন ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের সিংহভাগ আমদানী-রপ্তানী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হওয়ায় সারাদেশ থেকেই যেমন মালবাহী গাড়িগুলো এই সড়কে চলাচল করে,তেমনি পর্যটন প্রসিদ্ধ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন,বান্দরবান,রাঙ্গামাটি,টেকনাফ,কাপ্তাইসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক বা দর্শনার্থীরা এই সড়ক পথেই চলাচল করে। এঅবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অপেক্ষাকৃত মাঝামাঝি স্থানে থাকা কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শত শত হোটেল,রেষ্টুরেণ্ট,ফাষ্টফুডসহ মিষ্টির দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিনই যাত্রাপথে খাওয়া বা বিশ্রামের জন্য ভীড় করে ্ যানবাহনের যাত্রীরা। আর দিনে দিনে ব্যস্ত হয়ে উঠা এসব হোটেল রেষ্টুরেষ্টে’এ ঠাই হয় হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর। সম্প্রতি সারাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে সরকার জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ এপ্রিল প্রথম দফায় এক সাপ্তাহের লকডাউন দেয় সরকার। পরবর্তীতে ১৪ এপ্রিল থেকে আবারো কঠোর লকডাউন ঘোষনায় মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে সবগুলো হোটেল,রেষ্টুরেষ্ট,ফাষ্টফুডসহ খাবার হোটেলগুলো। ফলে গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট মহাসড়কের পাশের হোটেলগুলোতেও স্থবিরতা নেমে আসে । পাশাপাশি হোটেল মালিকদেরও প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার গচ্ছা। সারা দিনরাত যে সকল হোটেলগুলো হাজার হাজার যানবাহনের যাত্রীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো। লকডাউনের কবলে পড়ে তারা এখন দিশেহারা। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। মহাসড়কের পাশে চালু থাকা একাধিক হোটেলের মালিক, কর্মচারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশী দুরপাল্লার বাসসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে। কুমিল্লায় মহাসড়কে রয়েছে প্রায় ১’শ কিলোমিটার অংশ। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীদের সাময়িক বিশ্রামসহ আপ্যায়নের জন্য কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ৩’শতাধিক বিভিন্ন মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট। প্রতিদিন সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা এই সকল হোটেল-রেস্টুরেন্টে সাময়িক যাত্রা বিরতী করে। এই সকল হোটেলগুলোতে রয়েছে কমপক্ষে ২৫/৩০ হাজার শ্রমিক। হোটেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নুরজাহান,মিয়ামি, ভিটা ওয়াল্ড, ডলি রিসোর্ট, টাইম স্কয়ার, ব্লু-ডায়মন্ড, কাকলি, কফি হাউজ, জিহান, প্রমুখ হোটেল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সকল হোটেলগুলোতে থাকে যানবাহনের যাত্রীদের উপচেপড়া ভীড়। পাশাপাশি দেশের বিলাস বহুল পরিবহনের বাসগুলো যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে হোটেলগুলোতে তাদের নিজস্ব কাউন্টারও চালু করেছে। এর ফলে হোটেলগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রতিদিন বিশাল কর্মযজ্ঞ আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান। বিগত ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথমদফা ধাক্কার পর সাম্প্রতিক সময়ে যখন হোটেল মালিকরা আবারো উঠে দাড়াবার চেষ্টা করছিল,ঠিক তখনই চলতি ৫ এপ্রিল থেকে আবারো দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের সাথে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষনায় থমকে গেছে এসব হোটেলের কর্মযজ্ঞ। এতে প্রায় সবগুলো হোটেল,ফাষ্টফুড দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ব্যবসা না থাকায় প্রতিদিন বিপুল অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মালিকপক্ষ । এছাড়াও বহু হোটেল ভাড়ায় পরিচালিত হওয়ায় অনেক হোটেল মালিকপক্ষ লোকসানের কবলে পড়ে ব্যবসা বন্ধের চিন্তাও করছে। মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার আমতলী এলাকার হোটেল ব্লু-ডায়মন্ড’র মালিক মোক্তার হোসেন বলেন,বাস বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই লস গুনতে হচ্ছে। একই হোটেল সুমন,জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিদিন কাস্টমারদের কাছ থেকেই ৪/৫’শ টাকা করে টিপস্ পেলেও এখন সেটা বন্ধ। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। তারা আরো বলেন, করোনার প্রভাব করে শেষ হবে সেটা বলতে পারছিনা। এজন্য সরকারীভাবে তাদের সাহায্য সহযোগীতার অনুরোধ জানান।
বিষয়টি জানতে চাইলে হাইওয়ে হোটেল মালিক সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান জানান, আমার সমিতির নিবন্ধনকৃত হোটেল মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রয়েছে ৪৮টি,এরবাইরে আরো ২২৫টি রেজিষ্টার্ড হোটেল , ফাষ্টফুড,মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেগুলোতে কমপক্ষে ২৫ হাজারেরও বেশী শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতো। এছাড়াও দুরপাল্লার গাড়িগুলোর চালক,সুপারভাইজারসহ অন্যান্য ষ্টাফদের পরিবর্তন করা হয় এখানেই। লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকায় তাই সবকিছুই এলোমেলো। এ অবস্থায় তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
কমেন্ট করুন