বুড়িচং উপজেলায় সাদকপুর আলিম মাদ্রাসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ আগষ্ট ২০২০ সালে দৈনিক কুমিল্লার কাগজ পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায় দু’টি পদে দুইজন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। একজন উপাধ্যক্ষ একজন কম্পিউটার অপারেটর। সেই প্রকাশিত বিজ্ঞাপ্তির ভিত্তিতে মোট ২৭ জন প্রার্থী ৫০০/- টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে আবেদন করেন। কাগজপত্রের জটিলতা এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ৫ জন রেখে ২২জন বাদ দেওয়া হয়। কাগজপত্র ঠিক থাকায় ৫ জনের লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র পাঠানো হয় বাড়িতে। কিন্তু বাদ যাওয়া ২২ জনের কোন একজনের চ্যালেঞ্জে নিয়োগটি স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে গত বছর মামলার জটিলতা সমাধান করে পুনরায় ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ আবার রূপসী বাংলা পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। নিজেদের সুবিধার্থে স্থগিত হওয়া নিয়োগটি ২০১৮ প্রজ্ঞাপনের হওয়ার পরেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ২৩ নভেম্বর ২০২০ এর সংশোধিত নতুন প্রজ্ঞাপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। যেখানে পুরোনো প্রার্থীরা ৫০০/- (পাচঁশত টাকা) ব্যাংক ড্রাফট করে আবেদন করার পরেও তাদের জন্য কোন সুযোগ রাখা হয়নি। নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই উঠে আসে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। কয়েকজন প্রার্থী এবং এলাকার বিশিষ্টজনের বক্তব্যে উঠে আসে বিভিন্ন অভিযোগ। বলা হয় কামাল নামের একজন প্রার্থীকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগেন অত্র মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সহ কমিটির লোকজন। খবর নিয়ে জানা যায় কামালের নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কামাল নিজে ৩জন সাপোর্টিং হিসেবে নিজের খরচে আবেদন করায়। যা ৩জনের মধ্যে ১জন মোবাইল ফোনে স্বীকারোক্তি দেন। নতুন বিজ্ঞাপ্তিতে ৮জন আবেদন করেন তার মধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে ৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়। যারা বাদ হয়ে গেছে তারা নিজেরাও জানেনা কেন তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দীন মুন্সী নামের একজন প্রার্থী বলেন, আমার লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র না আসায় আমি প্রিন্সিপালকে ফোন করি। আমাকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে বলে অফিসে এসে জানার জন্য। অফিসে গেলে অফিস সহায়ক জানায় আমার নাকি আবেদনে স্বাক্ষর ছিলোনা। দেখাতে বললে বলেন, ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। আমি ১০০% শিউর আমি স্বাক্ষর করেছি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা লোক ঠিক করে রাখছে তাই নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি সহ অন্যদেরকে বাদ দিয়েছে। অত্র মাদ্রাসার সাবেক বিদ্যোৎসাহী সদস্য এবং বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. রেজাউল করিম বলেন, সাদকপুর আলিম মাদ্রাসা এটা আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই প্রতিষ্ঠান করে গেছেন। এগুলো সঠিক ভাবে আমরাই পরিচর্যা করতে হবে। আপনারা দেখেন মাদ্রাসায় একজন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেবে সেখানে আগেই কামাল নামের একজনকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ঠিক করে রেখেছে। তার নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য তাকে দিয়ে আরো ৩ জন সাপোর্টিংকে নিজ খরচে আবেদন করে দিয়েছে। তার সাপোর্টিং দুই জনের সাথে আমি কথা বলছি এবং তার প্রমান আমার মোবাইলে আছে। আমি র্দীঘ ২২ বছর সাদকপুর আলিম মাদ্রাসার বিদ্যোৎসাহী সদস্য ছিলাম। দুর্নীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাকে এই মাদ্রাসার বিদ্যোৎসাহী সদস্য থেকে ষড়যন্ত্র করে বাদ দিয়েছে। দুর্নীতির কারণে এই নিয়োগটার বিরুদ্ধে একবার মামলা হয়েছে তারপরেও তারা ঠিক হয়নি। আমি চাই ফ্রেশ নিয়োগের মাধ্যমে যোগ্য লোক এখানে আসুক। এই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল একটা অযোগ্য এবং ফাকিবাজ লোক তাই সে এই প্রতিষ্ঠানকে সব সময় পিছিয়ে রাখতে চায়। প্রশাসন যেন এই বিষয়টা একটু দেখেন সেই জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এই বিষয়ে প্রিন্সিপাল মাও.শহীদুল্লাহ্ আনসারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বে যারা আবেদন করেছিলো প্রজ্ঞাপন সংশোধন হওয়ায় তা বাদ হয়ে গেছে। আমার জানা মতে কোন অনিয়ম হয়নি। বাহিরে কে কি বললো সেটা আমার দেখার দরকার নাই। এলাকার মানুষ অনেকে অনেক কথাই বলবে। আর কামালের বিষয়টা আমি জানি না যখন নিয়োগ হয় তখন দেখা যাবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন, এটা মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে। এখানে আমি নিজ থেকে কিছু করার অধিকার নেই। তবে যদি উর্ধতন কর্মকর্তা আমাকে নির্দেশনা দেয় তাহলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
কমেন্ট করুন