৮১ বছর পর শনিবার রাতে বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং রাত সাড়ে ১০টায় সংবাদ ও সাময়িক প্রসঙ্গের অনুষ্ঠান ‘প্রবাহ’ আর ‘পরিক্রমা’ শেষ বারের মতো প্রচারিত হবে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন লন্ডনে মানসী বড়ুয়া আর ঢাকায় আকবর হোসেন। বিবিসি বাংলা
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে ব্যাপক পরিবর্তনের পটভূমিতে বিবিসি বাংলা রেডিও বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বাংলায় রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। বিবিসি বাংলার সম্পাদক সাবির মুস্তাফা বলেন, ‘বিবিসি বেশ কিছু দিন থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে, এখন এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করা হবে।’
তিনি বলেন, রেডিও শ্রোতাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে, তারা যেন সংবাদ এবং সাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার ইত্যাদির জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেন – অর্থাৎ, বিবিসি বাংলার নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.bbcbangla.com ), ইউটিউব চ্যানেল (https://www.youtube.com/bbcbangla ), ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/BBCBengaliService ) এবং টুইটার (https://twitter.com/bbcbangla )।
বিবিসি বাংলা রেডিও যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর, একটি সাপ্তাহিক নিউজলেটার দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকালে মিত্রপক্ষের বক্তব্য ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই শুরু হয়েছিল বিবিসি বাংলা রেডিওর যাত্রা। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে বিবিসি নামটি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পায় ১৯৭১ সালে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়।
বিগত আট দশকে বিবিসি বাংলার রেডিও অনুষ্ঠানমালা এবং ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। রেডিওর চূড়ান্ত সম্প্রসারণ ঘটে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে যখন চতুর্থ একটি দৈনিক অধিবেশন শুরু করা হয়। তার চার বছরের মাথায় সকালের দুটি রেডিও অধিবেশন লন্ডন থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিবিসি বাংলার সাংবাদিক সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ ঘটে।
তবে রেডিওর শ্রোতা কমে যাওয়ায় বিবিসি বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। চ্যানেল আই-এর সহযোগিতায় ‘বিবিসি প্রবাহ’ নামক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান নিয়ে ২০১৫ সালে বিবিসি বাংলা বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করে।
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রেডিও শ্রোতা সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে, বিশেষ করে সংবাদ এবং সাময়িক প্রসঙ্গের ক্ষেত্রে। বিবিসির গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে মানুষ সংবাদের চাহিদা মেটানোর জন্য টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন।
সাবির মুস্তাফা বলেন, বিবিসি বাংলা রেডিও ঘিরে অনেক স্মৃতি, অনেক আবেগ রয়েছে। কিন্তু যারা সংবাদের প্রতি আগ্রহী, তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য বিবিসি রেডিও বন্ধ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমেন্ট করুন