বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে
আপডেট করা হয়েছে
মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
১৫৭
বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্ট :
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ। সোমবার রাতেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ায় এর নাম দেয়া হয়েছে হামুন। এতে বড় দুর্যোগের শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতি বাড়িয়ে বাংলাদেশের উপকূলের ৩৫০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে।মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৯) এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সকাল ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০কি.মি., যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারি (২৮৯ মিমি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
এই সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত (পুনঃ) ০৪ (চার) স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। অবশ্য সোমবার ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। অন্যদিকে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে বন্ধ থাকবে জাহাজ চলাচলও। প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘গভীর নিম্নচাপটি শক্তি অর্জন করতে করতে ক্রমশ উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তার গতিবেগ বৃদ্ধি পাবে এবং গতিপথ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।’
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী দুই-তিন দিন চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকা এবং ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাগরে সতর্ক সংকেত দেওয়ার পরপরই উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। কোস্টগার্ড সদস্যরা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের আশপাশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
অন্যদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবার বেলা তিনটার মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। নির্দেশনার কথা জানিয়ে দ্বীপে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় মঙ্গলবার থেকে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ, স্পিড বোট, কাঠের বোট বা যে কোনো জলযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত সব পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্ট মার্টিনে মাইকিং করে দ্বীপের সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
কমেন্ট করুন