আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। মানুষ এ দুনিয়ায় এসে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করবে, এটাই তার সৃষ্টির মূল রহস্য। যেমনটি এক হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন-
আল্লাহ তায়ালা গোটা পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগি জীবনযাপন করে চিরস্থায়ী জীবন তথা আখিরাতের কামিয়াবি অর্জন করার জন্য। আর এই ইবাদত-বন্দেগির পদ্ধতি ও তার নিয়মকানুন কী হবে, এর পরিপূর্ণ বিবরণ ও তার বাস্তবায়ন দেখিয়ে গেছেন নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে। যারা মানুষকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সব বিষয় সুন্দরভাবে পালন করার নিয়ম-নীতি ও দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
যেমন সালাত কিভাবে পড়তে হবে, রোজা, হজ, জাকাত, সব জিনিস এবং মানুষের কাছে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরা, আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের প্রচার-প্রসার করা এবং তাঁর ইবাদতের পথ ও পন্থা বাতলে দেয়া- এরই নাম হলো দাওয়াত ও তাবলিগ। এই দাওয়াত ও তাবলিগের ধারাবাহিকতায় আগমন করেন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা:। যিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে আর কোনো নবী দুনিয়াতে আসবেন না। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এ দ্বীনের পূর্ণতা দান করেছেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি আজ তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। আর আমার নিয়ামতকে তোমাদের ওপর পূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম’(সূরা মায়েদাহ-৩)।
সুতরাং নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর মাধ্যমে এ দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা দেয়া হয়েছে যার ফলে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আর কোনো নবী-রাসূল আসবেন না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনুগ্রহ করে আমাদেরকে সেই আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা:-এর উম্মত বানিয়েছেন। যেই উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা সর্বদিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যেমন- এই উম্মতের আগে অন্য কোনো উম্মত জান্নাতে যেতে পারবে না। এই উম্মতের হায়াত হবে অল্প এবং আ’মলও হবে কম। কিন্তু বিনিময় বা সওয়াব হবে অন্যদের থেকে অনেক বেশি।
একে একে লক্ষাধিক নবী-রাসূল আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এভাবে নবী-রাসূলদের ধারাবাহিকতা শেষ হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:কে এই দুনিয়ার বুকে পাঠিয়েছেন। যার পরে আর কোনো নবী দুনিয়াতে আসবেন না। কিন্তু দ্বীনের এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ কিয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে।
সুতরাং নবীদের যে কাজ ছিল, ‘মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকা এবং মানুষের মাঝে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসার করা নবীর নায়েব হিসেবে এই দায়িত্ব উম্মতকে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনের দিকে পথপ্রদর্শনের মতো এ মহান কাজের দায়িত্ব এই উম্মতকে দেয়ার কারণে এই উম্মতের হায়াত অল্প হলেও বিনিময় তথা সওয়াব বেশি দেয়া হবে। আর তাই তো এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও তার কারণ সম্পর্কে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। কেননা, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে (সূরা আলে ইমরান-১১০)।
যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করেছেন। হযরত নূহ আ: এই দাওয়াতের কাজ করেছেন। অনুরূপ হজরত ইবরাহিম আ: এই দাওয়াতের কাজ করেছেন- হজরত মূসা আ:, হজরত ঈসা আ:, হজরত হারুন আ:, হজরত ইদ্রিস আ:সহ এভাবে সব নবী-রাসূল এই দাওয়াতের কাজ করেছেন এবং এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করতে গিয়ে সব ধরনের ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট স্বীকার করেছেন। নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন, পরিবার-পরিজন ত্যাগ করেছেন, মানুষের জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন।
সর্বশেষ আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা: এই দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেছেন তা আমরা কম-বেশি সবাই জানি এবং উম্মত হিসেবে জানা থাকাও জরুরি। এই দ্বীনের খাতিরে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। কাফেরদের গালি-গালাজ শুনেছেন। পাথরের আঘাতে নিজের শরীরের তাজা রক্ত প্রবাহিত করেছেন। যেই শরীরে মশা-মাছি পর্যন্ত বসা হারাম ছিল, সেই শরীরে কাফেররা পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছে শুধু এই দ্বীনের দাওয়াতের জন্য।
এ জন্য এ দাওয়াতের কাজ সব মুসলমানকে সুন্দরভাবে করতে হবে। আখেরি নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দ্বীনের দিকে ডাকা ও দাওয়াত দেয়া এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ কাজের সাথে লেগে থাকা।
কমেন্ট করুন