1. shahalom.socio@gmail.com : admin :
  2. banglarmukh71@gmail.com : admin1 :
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

ইসলামে শিষ্টাচারের গুরুত্ব

  • আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
  • গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য শিষ্টাচারের সব নিয়মই শিখিয়ে গেছেন। তাঁর শেখানো শিষ্টাচার তথা আদবের মধ্যে রয়েছে চলাফেরা, খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রীর ভালোবাসা ও দাম্পত্য জীবনের যাবতীয় আদব-কায়দা। এমনকি তিনি টয়লেটে যাওয়ার আদবও শিখিয়েছেন উম্মতকে। হযরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ‘মোশরেকরা আমাদের বলে, এ কেমন কথা! তোমাদের নবী তোমাদের সবকিছুই শিক্ষা দেন, এমনকি পেশাব-পায়খানার নিয়মও! তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! তিনি আমাদের পায়খানা-পেশাবের সময় কেবলামুখী অথবা কেবলাকে পেছন দিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। ডান হাতে ঢিলা-কুলুপ ব্যবহার, তিনটির কম পাথর ঢিলা হিসেবে ব্যবহার অথবা হাড় কিংবা গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (মুসলিম শরীফ)।

ইসলাম (মুসলিম)সমাজের সব মানুষকে সালামের মাধ্যমে একে-অপরকে অভিবাদন জানানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। ফলে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ঈমান আনয়ন করো এবং তোমরা ততক্ষণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রসার করো।’ (মুসলিম শরীফ)। কেউ যদি কাউকে সালাম দেয় ; তবে তার জন্য সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদনপ্রাপ্ত হও, তখন তোমরা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সম্ভাষণ করো অথবা একইভাবে অভিবাদন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সূরা নিসা : ৮৬)।
ইসলাম বলেছে, কে প্রথমে সালাম দেবে। নুর নবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন আরোহী পথচারীকে সালাম দেবে, একজন পথচারী বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে এবং ছোটো দল বড় দলকে সালাম দেবে।’ (মুসলিম শরীফ)। সালামের পর আসে কালাম তথা কথার প্রসঙ্গ। এ সম্পর্কেও প্রিয়নবী (সা.) স্পষ্টভাবে আমাদের শিষ্টাচার শিখিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেকের উচিত পরিষ্কারভাবে কথা বলা। যেন শ্রোতারা তার বক্তব্য বুঝতে পারে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কথা এতটাই পরিষ্কার এবং শ্রুতিমধুর ছিল যে, তাঁর কথা বুঝতে কারও কোনো অসুবিধা হতো না।’ (আবু দাউদ)। বক্তা এবং শ্রোতা উভয়েরই মুখের চেহারা ও কথাবার্তা যেন তৃপ্তিকর ও আনন্দদায়ক হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোনো নেক কাজকেই হেলাফেলা করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে দেখা করা হয়।’ (মুসলিম শরীফ)।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানবদেহের প্রতিটি জোড়ের জন্য সদকা রয়েছে। দুজন লোকের মধ্যে ন্যায়বিচার করা একটি সদকা; কাউকে বাহনে আরোহণ করায় সহযোগিতা করা অথবা বাহনে তার সামগ্রী তুলে দেওয়া একটি সদকা; উত্তম কথা বলাও একটি সদকা; ফরজ নামাজের জন্য মসজিদের পথে প্রত্যেকটি কদম একটি সদকা এবং পথ থেকে কোনো কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়াও একটি সদকা।’ (বোখারি)।
ইসলাম ঘরে প্রবেশের আদব সম্পর্কে বলেছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে অনুমতি না নিয়ে এবং তাদের সালাম না করে প্রবেশ করো না।’ (সূরা নুর : ২৭)। ‘তোমাদের সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে, যেমন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা করে।’ (সূরা নুর : ৫৯)। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষের নিরাপত্তা এবং ঘরের গোপনীয়তা রক্ষা করা। যেমন হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর ঘরে উঁকি মেরেছে। সে সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাতে একটি দাঁতন ছিল, যা দিয়ে তিনি মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তিনি তাকে বললেন, যদি আমি দেখতাম যে তুমি উঁকি মেরেছ, তাহলে আমি এটা দিয়ে তোমার চোখ ফুঁঁড়ে দিতাম। অনুমতি নেওয়া খুবই জরুরি, যেন কেউ অন্য কারও গোপন কিছু দেখে না ফেলে।’ (বোখারি শরীফ)।
নাছোড়বান্দার মতো অনুমতি চাইতেই থাকা ঠিক নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করা উচিত। যদি অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে ভালো, অন্যথায় তার ফিরে যাওয়া উচিত।’ (মুসলিম শরীফ)।

খাওয়ার আদব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।’ (বোখারি)। তিনি আরও বলেছেন, ‘মানুষ তার পেটের চেয়ে খারাপ কোনো পাত্র পূরণ করে না। মানুষের জন্য কয়েক গ্রাস খাবার খাওয়াই যথেষ্ট, যা দ্বারা সে নিজের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখতে পারে। আর যদি তাকে বেশি খেতেই হয়, তাহলে সে যেন পেটের এক-তৃতীয়াংশ খায়, এক-তৃতীয়াংশ পান করে এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখে।’ (তিরমিজি)। খাদ্য বা পানীয়ের পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করা বা ফুঁঁ দেওয়া নিষেধ। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করতে বা ফুঁঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ)।
এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিষ্টাচার কী হবে, তা হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন। এসব মেনে চললে আমাদের দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর ও আলোকিত হবে, তেমনি আখেরাতের জীবনও সুন্দর এবং সুখকর হবে – ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ইসলামের যাবতীয় আদব-কায়দা তথা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ইসলামী কলামিস্ট, সংগঠক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেসক্লাব, কুমিল্লা।০১৭১৮-২২৮৪৪৬

শেয়ার করুন

কমেন্ট করুন

আরো সংবাদ পড়ুন