প্লাস্টিক ও আধুনিক তৈজসপত্রের ভিড়ে ভালো নেই জয়পুরহাটের মৃতশিল্পীরা। এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন কারিগরেরা। প্রশিক্ষণ বা বিকল্প জ্ঞান না থাকায় এখন বিকল্প কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করতে পারছেন না তারা।
মৃৎশিল্পীরা জানান, মাটির তৈজসপত্র তৈরি করে একসময় বেশ ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন এসব পরিবার। বর্তমানে সেগুলোর চাহিদা কমে যাওয়ায় খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা। একদিকে তৈজসপত্রের তৈরির কাঁচামাল খরচ বেশি আর অন্যদিকে চাহিদা ও পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, একসময় জয়পুরহাটের পাড়া মহল্লায় অসংখ্য মৃৎশিল্পী পরিবার মাটির তৈরী হাঁড়ি, পাতিল, প্লেট, বাটি, জগ, গ্লাস, কলসি, কাপ-পিরিচ, ব্যাংক, শো-পিস, খেলনা, পুতুল, পিঠা তৈরির খরমাসহ নানা তৈজসপত্র তৈরি ও ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে প্লাস্টিক, সিলভার, মেলামাইন, সিরামিক, স্টিলসহ আধুনিক তৈজসপত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিতে তাদের ব্যাবসা একবারেই মন্দা হয়ে গেছে।
জয়পুরহাট শহরের তেঘর পালপাড়ায় এক সময় এ পেশায় যুক্ত ছিলেন শতাধিক পরিবার। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায় মন্দা ও ধস নামায় যুক্ত আছেন মাত্র ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। জেলাজুড়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ধীরে ধীরে মৃৎশিল্পীদের পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ কোনোভাবে পূর্বপুরুষের এ পেশা ধরে রেখেছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের দাবি জানান তারা।
কুমার পাড়ার মৃৎশিল্পী অর্পন্না রানি পাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বর্তমান প্লাস্টিক, সিলভার, স্টিল, মেলামাইনের তৈজসপত্র ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের কর্ম দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো মাটির জিনিসপত্র আর ব্যবহার হয় না। আমরা খুব কষ্টে আছি’।
তেঘর পালপাড়া গ্রামের মিরা পাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘মাটি ও জ্বালানীর দাম বেশি অথচ আমাদের পণ্যের দাম কম। বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও থেকে কিস্তির টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু ব্যবসা খারাপ হওয়ায় কিস্তিও ঠিকমতো দিতে পারছি না’।
দিপালি পাল ও চন্দ্রনাথ পাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করতেছি। এ পেশার উপর দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া ও সংসারের সমস্ত খরচ চালাইতে হয়। বাপ দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতেও পারছি না আবার ছাড়তে পারছি না’।
তারা বলেন, ‘আমরা তো অন্য কাজ জানি না। তাই টিকে থাকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও সরকারি প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করতো তাহলে আমরা টিকে থাকতাম’।
বিসিক শিল্পনগরী উপ ব্যাবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ নয়া দিগন্তকে বলেন, এ জেলায় ধীরে ধীরে মৃৎশিল্পীরা কমে যেতে বসেছে। তার পরও কিছু মৃৎশিল্পী এ পেশা ধরে রেখেছেন। তাদের তৈরি পণ্য আধুনিকায়ন ও বাজারজাতের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক
সহযোগিতার প্রয়োজন হলে বিসিকের পক্ষ থেকে তা করা হবে।
কমেন্ট করুন